শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ায় পাঁচ আসনে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় পাঁচ আসনে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত

তৃণমূল গুছিয়ে বগুড়ার পাঁচটি আসনে প্রার্থী মনোনীত করেছে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াত। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি জোটের শরিক দল জামায়াত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুর্বল হলেও পাঁচটি আসনে প্রার্থিতা জানান দিতে চায় জামায়াত এখনো শক্তিশালী। জেলা জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তাদের সমর্থিত বগুড়া পৌরসভায় বর্তমানে নির্বাচিত মোট ৮ জন কাউন্সিলর আছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আছেন ৪ জন। বাকি ৪ জন পুরুষ কাউন্সিলর। কাউন্সিলরদের মধ্যে একজন নারী প্যানেল চেয়ারম্যানও রয়েছেন। এই কাউন্সিলররা তাদের নিজ নিজ এলাকায়  সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার আগেই বগুড়া থেকে পাঁচটি আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর নাম তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। বগুড়া জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দরা বলছেন তারা বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকলেও তাদের জোটের তেমন কার্যক্রম নেই। এই কারণে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বগুড়ায় পাঁচটি আসনে ভোট করতে চান তারা। পাঁচটি আসনের মধ্যে বগুড়া-১ আসনের প্রার্থী জামাত নেতা অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, বগুড়া-২ আসনের সাবেক এমপি শাহাদুতুজ্জামান। তিনি ১৯৯১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বগুড়া-৪ আসনে মাওলানা তায়েব আলী, বগুড়া-৫ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ দবিবুর রহমান, বগুড়া-৬ আসনে সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবেদুর রহমান।

জামায়াতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় তাদের ভোটারদের ভিতর বেশির ভাগেই মহিলা। আর এই ভোটারদের মধ্যে অনেকেই ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নেতা ছিলেন। তাদের নিজস্ব দান এবং সংগঠনটির ব্যাংক, বীমা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিল্পকলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারগুলো থেকে যে অনুদান আসে তা দিয়েই নির্বাচন করা সম্ভব। জামায়াত নেতারা বলছেন দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির সঙ্গে জোট ভেঙে গেছে এমনটি নয়। কিন্তু বগুড়ায় বিএনপির ঘাঁটি বললেও জামায়াতের ভোট কোনো অংশে কম নেই। তাদের সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে যুদ্ধ অপরাধীর কারণে মৃত্যুদে  দি ত করা হয়েছে। তারপরও বগুড়ায় শক্তি জানান দিতে চায় জামায়াত। তাদের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ নেই। মসজিদ, মাদরাসা, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল ও তাদের সমর্থিত শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী দিয়ে জেলার ১২টি উপজেলায় সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি সংগঠনের নিবন্ধনের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত সংগঠনটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে থাকার কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। নিবন্ধন বাতিল হলেও বগুড়ায় জামায়াত ২০১৩ সালে ৩মার্চ দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে যে তা ব চালিয়েছিল তা বগুড়ার ইতিহাসে ছিল ভয়ংকর। তারা লুকোচুরি করে মোবাইলে এবং তাদের নামে বেনামে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সংগঠনটি ধরে রেখেছে। বগুড়ায় জ¦ালাও-পোড়াও, হামলা ও অগ্নিসংযোগে প্রায় ২০০টি মামলা চলমান। এসব মামলা মাথায় নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এ সংগঠনটি। জামায়াত নেতারা বলছেন যদি নির্বাচনের পরিবেশ থাকে তাহলে তারা এককভাবে বগুড়ায় নির্বাচন করবেন। শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবদুল মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা অনেকটা ঘরোয়াভাবেই রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ঘরোয়া বৈঠক থেকেও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে এ সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচন করা যায়। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি সারা দেশেই প্রার্থী দিয়েছে। পরিবেশ ভালো হলে আমরা নির্বাচনে যাব। তিনি বলেন- বগুড়া জেলায় জামায়াতের মোট নেতা-কর্মী রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তার মধ্যে মহিলা কর্মী ২ হাজার। এ ছাড়াও শুধু বগুড়া শহরে ৫ হাজার নেতা-কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে মহিলা কর্মী রয়েছে ১ হাজার ৫০০। এই নেতা-কর্মীরা অধিকাংশই ছাত্র শিবির ও ছাত্রী সংস্থার সাবেক নেতা ছিলেন। তিনি আরও বলেন- সরকার আমাদের সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করলেও বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর