শিরোনাম
রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বালুখেকোদের তাণ্ডবে বিপন্ন প্রমত্তা পদ্মা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

বালুখেকোদের তাণ্ডবে বিপন্ন প্রমত্তা পদ্মা

স্তূপ করে রাখা নদী থেকে তোলা বালু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছোট-বড় একাধিক সাদা পাহাড়। আসলে কোনো পাহাড় নয়, এগুলো বিশাল আকারের বালুর ঢিবি। পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু তুলে ঢিবি করে রাখা হয়েছে শহরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন রাতে শত শত ট্রাকে বালু নিয়ে যায় বিভিন্ন স্থানে। কোনো বৈধতা না থাকলেও দিনের পর দিন পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে তা বিক্রি করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বুধবার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, বালু তোলার কারণে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের লোকজন। ডিক্রিরচরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটের কয়েকজন বলেন, যারা বালু তুলছেন তারা প্রভাবশালী। সবাই তাদের চেনেন। আমরা নাম বললে পিটিয়ে পদ্মা নদীতে ফেলে দেবে। স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বিশাল এলাকা থেকে কয়েক মাস ধরে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। দিনে ড্রেজার মেশিনগুলো পদ্মার নির্জন স্থানে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে ড্রেজারগুলো চলে আসে সিঅ্যান্ডবি ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। রাতভর চলে বালু উত্তোলন কাজ। ধলার মোড় থেকে শুরু করে সিঅ্যান্ডবি ঘাট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হয়। ছোট-বড় ট্রলার ও বার্জ ভর্তি করে তা নিয়ে আসা হয় সিঅ্যান্ডবি ঘাটে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে এবং শ্রমিক দিয়ে বালু ঢিবিতে নেওয়া হয়। প্রতিরাতে কয়েকশ ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয় পদ্মা নদী থেকে। বালু তোলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে নেওয়া হয় নানা কৌশল। তারা বলেন, সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় বেশ কয়েকজন বালুর ব্যবসা করেন। তারা সিলেট, রাজবাড়ীর ধাওয়া পাড়া ও সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী থেকে বৈধভাবে বালু কিনে আনেন। সেই বালুর আড়ালে চলে অবৈধ এ বালুর ব্যবসা। পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার পর তা রাখা হয় বিভিন্ন খোলায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বৈধ বালুর খোলায় নেওয়া হয় অবৈধ বালু। ডিক্রিরচর ইউনিয়নের যেসব স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেসব গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাড়িঘর সরিয়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। ডিক্রিরচর ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, বালু কাটার বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে নদীভাঙন হচ্ছে ব্যাপক হারে। যদি কেউ বালু কাটার সঙ্গে জড়িত থাকে সে বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী জানান, নদী থেকে বালু তোলার কোনো বৈধতা নেই। এ কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর