সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে জীবন-জীবিকা

মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে জীবন-জীবিকা

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় তিনটি ধাপে ৬৫৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়িগুলোতে এখন উপকারভোগীরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। যাদের একসময় ঠিকানা ছিল না, তারা নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা পেয়েছেন। বাড়ি পাওয়ার পর থেকে কেউ বাড়িতে মুদি দোকান, কেউবা চায়ের দোকান, কেউবা গরু-ছাগলের খামার, সেলাই মেশিন আর কেউবা সবজি চাষ করে জীবিকানির্বাহের পথ বেছে নিয়েছেন। কথা হয় গোঙলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী তসলিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে সংসার করার পরে তিন বছর ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামী ছাড়া এখন চলছি। আগে বাপের বাড়িতে ছিলাম, বহু কষ্টে দুই সন্তানকে নিয়ে দিন যাপন করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়িতে এসে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান দিয়ে ভালোই চালাচ্ছি। যদি এ বাড়িটি না পেতাম তাহলে হয়তোবা এ স্বপ্ন আমি কখনো বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। জীবনে কখনো কল্পনা করতে পারেনি যে, এত সুন্দর একটা পাকা বাড়ি পাব, তা আবার কোনো টাকা ছাড়া। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ জানান তিনি। একই এলাকার অন্য উপকারভোগী সুফন বেগম জানান, নয়াদিয়াড়ী গ্রামে রাস্তার ধারে ভাঙা ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন কিন্তু এখন একটা পাকা বাড়ি পেয়েছেন তিনি। স্বামী তেমন খাটতে পারেন না, তাই বাড়ির ভিতরে বেগুনসহ আশপাশে নানা ধরনের শাক-সবজি লাগিয়ে নিজেও খান এবং বাইরেও বিক্রি করেন। স্বামী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন সুখে-শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে গোমস্তাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী পপি বেগম জানান, তার স্বামী একজন ফেরিওয়ালা, হাটবাজারে পেয়ারা বিক্রি করে দিন আনে দিন খান। স্বামীর কষ্ট দেখে তিনি স্বামীর সঙ্গে নিজের সংসারের হাল ধরেছেন। তাদের একটা ঘোড়া আছে, সেই ঘোড়াতে ঘানি দিয়ে সরিষার তেল তৈরি করে বিক্রি করেন। পাশাপাশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনসহ বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে তা বিক্রি করে দিন চালাচ্ছেন। আর এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে একটা পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য। তাই শেখ হাসিনার জন্য তিনি দোয়া করে বলেন, আল্লাহ তাঁকে যেন খুব ভালো রাখেন। এ ছাড়া বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর মৌজার উপকারভোগী মুসলেমা বেগম জানান, আগে নামো কাঞ্চনতলায় রাস্তার ধারে পরের জমিতে একটা ছাপড়া ঘরে বাস করতেন দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে। সেখান থেকে আলমপুরের সরকারি বাড়িতে এসে তার সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটিরও বিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বামী বাইরে কাজ করে আর তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। আল্লাহর রহমতে তারা এখন খুব ভালো আছেন। আর এটা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়েছে এ বাড়ি পাওয়ার জন্য। এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করায় তারা যেমন মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, ঠিক তেমনি পেয়েছেন নতুন এক ঠিকানা। তাদের বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনেরও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকের বেকারত্ব দূর হয়েছে, ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছেন, সমাজে নতুন করে পরিচিত হচ্ছেন তারা। তাদের জীবনাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন তারা।

সর্বশেষ খবর