শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যানজটে নাকাল নওগাঁ পৌরবাসী

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

যানজটে নাকাল নওগাঁ পৌরবাসী

নওগাঁ পৌর শহরে গত এক দশকে কয়েকগুণ মানুষ এবং যানবাহন  বেড়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট রয়েছে আগের মতোই। অপরিকল্পিতভাবে শহরের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা ও সিএনজি বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন কোনো রাস্তা তৈরি এবং প্রশস্ত না হওয়ায় বাড়ছে যানজট। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভোগান্তি। যানবাহনের শব্দে অতিষ্ঠ শহরবাসী। এমন যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। পরিকল্পিত নগর ও পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার- বলছেন সচেতন নাগরিকরা। নওগাঁ শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে তাজের মোড়, বাটার মোড়, ব্রিজের মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, মুক্তির মোড়, রুবীর মোড় ও দয়ালের মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণিবিতান, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ সড়ক দিয়ে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে কিছু দূর পর পর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ফলে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। শহরের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং অবৈধভাবে চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের সরিষাহাটির মোড় থেকে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বাটার মোড়, ব্রিজ মোড়, লিটন ব্রিজের ওপর ও তাজের মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল করেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। রাস্তার দুই পাশে স্থায়ী দোকান থাকার পর দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পরিচালনা করেন। গোস্তহাটির মোড় থেকে মিষ্টিপট্টি, চুরিপট্টি, তুলাপট্টি, কাপড়পট্টি অন্যদিকে আটাপট্টি ও ডাবপট্টিতে স্থায়ী দোকানিরা তাদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে মালামাল রাখে। এতে রাস্তায় ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ছোট যান চলাচল করায় পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দোকানিদের দখলে থাকায় পথচারীরা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যেতে পারছেন না।  নওগাঁ পৌরসভার হিসাব মতে, শহরের আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে চলাচলে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় ১৫ হাজার। এ ছাড়া মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার। শহরের বেশ কয়েকজন দোকানি বলেন, এই শহরে আয়তনের তুলনায় অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেখা দিয়েছে বেশ কিছু সমস্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগর ব্যবস্থা উন্নত না করার ফলে শহরে বসবাসরত জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। তাই ভোগান্তির সমানুপাতিক হারে কমে যাচ্ছে শান্তির সমীকরণ। শহরে বসবাসরত জনসাধারণকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থার কারণে। শহরের অধিকাংশ সড়কই সংকীর্ণ এবং মারাত্মকভাবে ভগ্ন রোগে আক্রান্ত।

 এতে প্রতিনিয়তই লেগে থাকে যানজট। শহরের বাটার মোড় এলাকার বেশ কয়েকজন কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর না থাকায় যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর ইজিবাইগুলো ইচ্ছামতো ঘোরানো হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর ফলে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। এদিকে চালকদের দাবি, শহরের ভিতরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের রাস্তার ওপরেই ইজিবাইকগুলো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া বৈধ ইজিবাইকের বাইরে অবৈধ কিছু ইজিবাইক চলাচল করে। তারা বলেন, অবৈধ ইজিবাইকের বিষয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শহরে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে যাবে। ফলে যানজট সমস্যাও কমে আসবে। নওগাঁর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম বলেন, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অপ্রশস্ত সড়ক ও নানা অব্যবস্থাপনায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সীমিত জনবল নিয়ে পুলিশ ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক বলেন, অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই চালকরা আন্দোলন করেন। যানজট সমস্যা ইদানীং প্রকট আকার ধারণ করেছে। পৌর শহরের যানজট নিরসনে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর