শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

৬২ বছর পর আলো জ্বলছে ১৩ পাহাড়ি গ্রামে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

৬২ বছর পর আলো জ্বলছে ১৩ পাহাড়ি গ্রামে

৬২ বছর পর আলোর মুখ দেখেছে রাঙামাটির ১৩ পাহাড়ি গ্রাম। এতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বিদ্যুৎ পেয়ে ঘরে বসে কর্মসংস্থান চাঙা করেছেন অনেকেই। তবে আনন্দের পাশাপাশি ছিল ক্ষোভ। দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বঞ্চিত থাকায় পিছিয়ে ছিল গ্রামবাসী। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি শহরের আশপাশের গ্রামে। স্থানীয়রা বলছে, এ বিদ্যুতের সুবিধা আরও কয়েক বছর আগে পেলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসত পাহাড়ের মানুষ। জানা গেছে, রাঙামাটি শহর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের বড়াদম, কামিলাছড়ি, মানিকছড়িসহ ১৩টি গ্রাম ছিল বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। গ্রামবাসী দূর থেকে বিদ্যুতের আলোয় উজ্জ্বল শহর দেখলেও নিজেরাই ছিল অন্ধকারে। তাদের জীবন চলত মোমবাতি বা হারিকেনের আলোয়। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার শিক্ষার্থীদের জীবনমান। সুবিধাবঞ্চিত ছিল তথ্য প্রযুক্তিসহ আধুনিকতা থেকে। রাঙামাটি সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, এতদিন আমরা অনেকটা বাতির নিচে অন্ধকারে ছিলাম। শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাইনি। এখন বর্তমান সরকারের উদ্যোগে রাঙামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নবাসী আলোর মুখ দেখেছে। এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রসর হচ্ছে। বড়াদম সুরবালা স্মৃতি বিদ্যাপীঠ কম্পিউটার প্রশিক্ষক মেওয়াই চিং মারমা বলেন, বিদ্যুৎ আসার ফলে আমরা অনেক খুশি। প্রায় দুই মাস হলো এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ক্লাস কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। শিক্ষার্থীরা আনন্দিত। মগবান ইউনিয়নের বড়াদমের আওলাদ বাজার এলাকার বাসিন্দা মানু চিং মারমা বলেন, আমাদের মোবাইল ছিল। কিন্তু মোবাইল চার্জ করতে পারতাম না। টিভি দেখিনি অনেক বছর। বলতে গেলে আধুনিকতা কী কিছুই বুঝতাম না। তবে বিদ্যুৎ আসার পর মুহূর্তে বদলে গেছে সব। তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হয় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। ৫৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অধীনে ১৬টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিভিন্ন কেভির ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাঙামাটিবাসী। কথা ছিল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে ফ্রিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ। কিন্তু বর্তমাণে ফ্রিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দূরের কথা টাকা দিয়েও বিদ্যুৎ ভোগান্তির কমতি নেই এ অঞ্চলের মানুষের।

সর্বশেষ খবর