শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অবৈধভাবে বালু তোলায় ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

অবৈধভাবে বালু তোলায় ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

নওগাঁর বদলগাছীর তেজাপাড়া নামক মৌজায় ছোট যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালু ইজারাদার ব্যক্তিরা। এতে গভীর গর্ত হয়ে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ওই স্থান থেকে বালু তুলে ও নদী রক্ষাকারী বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। চলাচলের রাস্তা নষ্ট করা ও ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসী ও ইজারাদার পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। জানা যায়, উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর বালুমহাল চলতি বছর ইজারা নেন সেনপাড়া গ্রামের তপন কুমার মণ্ডল ও তার লোকজন। কিন্তু বালুমহাল ইজারা নিলে ও নদীতে তেমন কোনো স্থানে পর্যাপ্ত বালু না থাকায় ইজারাদাররা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর সাইট থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছেন। এক মাস ধরে বালুমহাল ইজারাদার কর্তৃক সদর ইউপির তেজাপাড়া মৌজার ছোট যমুনা নদীগর্ভ থেকে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করছিল। আর এ বালু ও মাটি পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর ও ট্রাক। অতিরিক্ত বালু ও মাটি বোঝাই ট্রাকগুলোর বেপরোয়া চলাচলে তেজাপাড়া যমুনা নদীর বিশ্ববাঁধ হয়ে গ্রামীণ মাটি, পাকা রাস্তা ও কোমারপুর পাকা রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোর রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবাধে চলছে বালু ও মাটিবাহী ট্রাক্টর। আরও জানা যায়, পরিবহনের যানজটে এলাকার মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়ছে। তেমনিভাবে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক্টর ও ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ সরু পাকা রাস্তাগুলো ধ্বংসের মুখে পড়েছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলো রক্ষাসহ এলাকার ছোট ছোট শিক্ষার্থীকে নিরাপদ চলাচলের জন্য তেজাপাড়া, কোমারপুর ও জিধিরপুর তিন গ্রামের নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বালু ও মাটি বোঝাই ট্রাক্টরগুলো আটকিয়ে প্রতিবাদ জানালে সেখানে ইজারাদারের লোকজন ও গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বালুমহালে তেজাপাড়া মৌজায় বালু তোলার কোনো পয়েন্ট উল্লেখ না থাকলেও ইজারাদারের লোকজন এক মাস ধরে অবৈধভাবে বালু তোলার নামে এসকেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে প্রায় ১২০০-১৫০০ গাড়ি বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তেজাপাড়া মৌজা থেকে অতীতে কখনো বালু তোলা কিংবা নদী চরের মাটি তোলা হয়নি। অথচ এক মাস ধরে ইজারাদারের লোকজন নদীর বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করে তেজাপাড়া গ্রামের পাশে নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি ও বালু তুলে বিক্রি করছে। গভীর গর্ত করে নদী চরের মাটি তোলায় নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রায় ৪০-৫০টি ট্রাকে করে প্রতিদিন অন্তত ২০০ বার গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালু ও মাটি পরিবহন করায় বেহাল হয়ে পড়েছে সড়ক।

এ জন্য স্থানীয়রা ওই স্থান থেকে বালু ও মাটি তোলার প্রতিবাদ করে আসছে। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভগিরত কুমার মণ্ডল বলেন, তপন কুমার মণ্ডলসহ আমরা ১০ জন বালুমহাল ইজারা নিয়েছি। উপজেলার এনায়েতপুর থেকে জাবারীপুর পর্যন্ত ১১টি পয়েন্ট তাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তেজাপাড়া পয়েন্টও রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তেজাপাড়া মৌজা থেকে বালু ও মাটি তোলা শুরুর পর থেকেই বাধা দিয়ে আসছে। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর