শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলে ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

বাড়ছে পরিবেশ দূষণ॥ উজাড় হচ্ছে বন

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

টাঙ্গাইলের একটি ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঠ

টাঙ্গাইলের বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় চলতি মৌসুমে ইট তৈরির জন্য  পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটা স্থাপন ও পরিচালনায় সরকারি নির্দেশনা মানছেন না অধিকাংশ মালিক। ফলে পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। ভুক্তভোগী এবং পরিবেশবাদীরা পরিবেশ অধিদফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা আরও জোরালো পদক্ষেপের দাবি করছেন। জেলা পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় রয়েছে ২৮২টি ইটভাটা। এর মধ্যে ১৩৪টি বৈধ এবং ১৪৮টি অবৈধ। সরেজমিন দেখা গেছে, নাগরপুর উপজেলার বেকড়া ইউনিয়নের ভালকুটিয়ার একটি ভাটায় পোড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাঠ সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের জাগিরাচালা গ্রামের আরেকটি ইটভাটায়ও চলছে কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি। বনাঞ্চল সমৃদ্ধ মধুপুর এবং ধনবাড়ীর প্রায় সব ভাটায় একই ধরনের প্রস্তুতি চলছে। বন কাছে হওয়ায় কাঠ সহজলভ্য। একজন ভাটা মালিক জানান, কয়লার দাম বেশি তাই কাঠ পুড়িয়েই ইট বানাই। ওয়াকশনের মাধ্যমে বনের এবং লোকাল থেকে কাঠ সংগ্রহ করি। এখানকার প্রায় সব ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়। মধুপুর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোতালিব হোসেন বলেন, আমরা বনের কাঠ পোড়াই না। ভাটায় প্রথম চুলা জ্বালাতে কয়েক হাজার মণ কাঠ লাগে। এ ছাড়া বাকি সময় কয়লা দিয়ে ইট পোড়াই। পরিবেশ গবেষক সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন একবারে নিষিদ্ধ। জেলার অনেক ভাটা স্থাপনে সে নিয়ম মানা হয়নি। অসংখ্য ভাটায় কয়লার পরিবর্তে ইট পোড়ানো হয় কাঠ দিয়ে। সখিপুর, মধুপুর, ঘাটাইল ও মির্জাপুরে এ ধরনের ভাটা বেশি। মধুপুর অঞ্চলে দায়িত্বরত পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক তাপস চন্দ্র পাল বলেন, বনাঞ্চল, স্কুল-কলেজ কিংবা লোকালয়ের আইন না মেনে স্থাপিত ইটভাটার সংখ্যা আমার জানা নেই। অনেক ভাটার লাইসেন্স নবায়ন না থাকলেও হাই কোর্টে মামলা চলমান থাকায় সেগুলো চালু আছে। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় তারা চোখ, ত্বক ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যথাযথ দূরত্ব মেনে ভাটা স্থাপন এবং পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে ইটভাটায় আগুন লাগানোর জন্য কাঠ পোড়ানো হয়। এগুলো দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। মধুপুরের ইউএনও শামীমা ইয়াসমীন বলেন, অবৈধ ইটভাটায় আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। কোনো ভাটায় কাঠ পোড়ানোর খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর