শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জমজমাট সোয়েটার গ্রাম

৫০০ কোটি টাকার শীতবস্ত্র বিক্রির আশা

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

জমজমাট সোয়েটার গ্রাম

গোবিন্দগঞ্জ নয়ারহাট গ্রামের কারখানায় তৈরি হচ্ছে শীতবস্ত্র

শীতের আমেজ শুরু হতেই জমে উঠেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোয়েটার গ্রাম নামে পরিচিত কোচাশহর ইউনিয়নের নয়ারহাট। সরকারি সহায়তা ছাড়াই এখানে ঘটেছে নিরব বিপ্লব। উপজেলার কোচাশহর, কামারদহ ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৫০ গ্রামে গড়ে উঠেছে শীতবস্ত্র তৈরির হোসিয়ারি শিল্প। বাড়ি বাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে সহস্রাধিক কারখানা। এখানে তৈরি শীতবস্ত্র আসে পাইকারি বাজার নয়ারহাটসহ কয়েকটি বাজারে। এবার শীত মৌসুমে এখানে উৎপাদিত শীতবস্ত্র বিক্রি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত ব্যবসায়ী দেড় মাস ধরে এ বাজার থেকে কিনতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শীতবস্ত্র। এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত উত্তরাঞ্চলের ছোট্ট এই জনপদ এখন কুটির শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজারের বেশি কারখানায় চলছে উৎপাদন। গত তিন বছরে পাঁচ শতাধিক কারখানায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যেগুলোতে অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড মেশিন বসানো হয়েছে। ঢাকা ও বিভিন্ন জেলার দক্ষ টেকনিশিয়ানরা কাজ করছেন। সোয়েটার উৎপাদিত শীতবস্ত্রের মধ্যে রয়েছে উলের মাফলার, মোজা, টুপি, কার্ডিগান, ব্লাউজ, সোয়েটার, ও বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাক। ভারত, তাইওয়ান, চীন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড থেকে উন্নত মেশিন ও উলেন সুতা আমদানি করেন উদ্যোক্তারা  বিভিন্ন আইটেমের শীতবস্ত্র তৈরি করেন। লাবিব হোসিয়ারির মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, কম্পিউটারাইজড মেশিনে তৈরি নতুন নতুন ডিজাইনের শীতবস্ত্র সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজার দখল করেছে। এখানকার কারখানায় উৎপাদনের সময় শ্রাবণ থেকে মাঘ (বাংলা) পর্যন্ত। প্রতিটি কারখানায় ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কারখানা ও হাট মিলিয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষের। শ্রমিকরা উৎপাদন সংখ্যার ভিত্তিতে দিনে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। শ্রমিকের ৩০ ভাগ নারী। বস্ত্র বুনন বা নিটিং, লিংকিং, চরকায় সুতা তোলা, সুতায় রং করা, বোতাম লাগানো ও প্যাকিংসহ নানা কাজ করেন শ্রমিকরা। শীতবস্ত্র তৈরির কারখানা ঘিরে গড়ে উঠেছে ৪ শতাধিক পাইকারি দোকান। যার মধ্যে প্রধান কোচাশহর ইউনিয়নের নয়ারহাট, রতনপুর ও ধারাইকান্দি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, সিলেট, ফরিদপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা নয়ারহাটে আসেন কাপড় কিনতে। হাটে আসা মৌলভীবাজারের নয়ন বাবু ও নারায়ণগঞ্জের বজলুর রহমান জানান, এখানে পোশাকের দাম কম এবং মানও ভালো। সিজনে ৪ থেকে ৫ বার আসেন মাল কিনতে। ৩ থেকে ৬ লাখ টাকার মালামাল কেনেন তারা। এসব পণ্যের চাহিদা গ্রাম ও শহরের মধ্য ও নিম্নবিত্তের কাছে বেশি। নয়ারহাট হোসিয়ারি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান সরকার বলেন, রাস্তার কারণে বড় গাড়ি এখানে আসতে পারে না। ভ্যান বা ছোট পিকআপে মালামাল কোচাশহরে নিতে দ্বিগুণ খরচ ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বার বার ধরনা দিয়েও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য নয়ারহাট থেকে কোচাশহর পর্যন্ত রাস্তাটি মেরামত করানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া এখানে কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় লেনদেনে অসুবিধা হয়। ব্যাংক ঋণও পাওয়া যায় না। এসব সমস্যা নিরসন করা গেলে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে বলে তিনি জানান। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান বলেন, এখানে গড়ে তোলা কুটির শিল্পকে সরকারি স্বীকৃতির ব্যবস্থা এবং রাস্তা সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর