মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শীতের শুরুতেই শিকার হচ্ছে অতিথি পাখি

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

শীতের শুরুতেই শিকার হচ্ছে অতিথি পাখি

নড়াইলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার। এ অঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের থেকে সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই বোকা বানিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতিদিন রাতে শিকার করছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। এ ব্যাপারে প্রশাসন কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে সুদূর হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলের খাল-বিল ও জলাশয়ে আসতে শুরু করেছে। এরা মূলত নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে আসে। মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবস্থান করে। ইতোমধ্যে নড়াইলের তিনটি উপজেলার চাঁচুড়ী বিল, ইছামতি বিল, কাড়ার বিল, নলামারা বিল, গোপালপুর-বগুড়ার বিলসহ বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালি হাঁস, কালকোচ, কায়েম, ডুঙ্কর, পানকৌড়ি, পাতাড়ি হাঁস, হাঁস ডিঙ্গি, কাদা খোঁচা, খয়রা, চেগা, কাচিচোরা, মদনটাক, শামুখখোলা ও বক অন্যতম। শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর এই অতিথি পাখির আগমনের কারণেই স্থানীয় চোরা শিকারিরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেতে উঠেছে পাখি নিধনের মহোৎসবে। সর্বত্র অতিথি পাখি শিকার যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অতিথি পাখি শিকারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফাঁদসহ নানা ধরনের অভিনব পদ্ধতি। চোরা শিকারির কারণে এ অঞ্চলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের স্থানগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় একাধিক শিকারিরা জানায়, এক সময় মাছ ও ফড়িং জাতীয় কীট-পতঙ্গে বিষটোপ দিয়ে, ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কিংবা ফাঁদপেতে পাখি শিকার করত। তবে এখন পাখি শিকারে শিকারি চক্র তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই বোকা বানাচ্ছে এসব পাখিকে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিল ও জলাশয়ে শিকারিরা রাতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক ডাউনলোড করছে স্ব স্ব মোবাইলে। এরপর রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা দেখে বিল ও জলাশয়ের বৃহৎ এলাকাজুড়ে বড় আকারের জালের ফাঁদ পেতে মোবাইলের মাধ্যমে ওইসব পাখির ডাক সাউন্ড বক্সে বাজানো শুরু করছে। এরপর পাখিরা ওই টোন শুনে মনে করছে তাদের অন্য সঙ্গীরা সেখানে নিরাপদে অবস্থান করছে। আর শিকারিদের এসব নিত্যনতুন প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে নিচে নামতেই জড়িয়ে পড়ছে পেতে রাখা ফাঁদে। এভাবে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত অভিনব কায়দায় নির্বিচারে পাখি নিধন করছে। এ ছাড়া রাতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে সকালে যখন খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তখন তাদের শিকারিদের কবলে পড়তে হয়। দিনেও শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। দিনে-রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। শিকারিরা প্রতি রাতেই নিধন করে হাজার হাজার অতিথি পাখি। শিকারিরা রাতে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তা বিক্রি করছে। পাখি শিকারি আলীম বলেন, ‘বাজারে অতিথি পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই যে কোনো উপায়ে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। আগে থেকেই বুকিং নেওয়া ক্রেতারা বাড়িতে ভোরের আলো ফোঁটার আগেই পৌঁছে যায়। এসব ক্রেতা আবার সমাজের এলিট শ্রেণির লোক।’ অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাখি শিকারি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে টাকা ও পাখি দিয়ে প্রতি রাতেই পাখি শিকার করে থাকি। কারণ প্রশাসনের কিছু কর্তাব্যক্তিও এই পাখির ক্রেতা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়িতে গোপনে পাখি পাঠিয়ে নির্বিঘ্নে তারা পাখি শিকার করে  চলেছে।

সর্বশেষ খবর