মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে উৎসাহ উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি শঙ্কা ও উত্তাপে রয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। কে হতে চলেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তা নিয়েই চলছে বেশি আলোচনা। কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি খোলাসা না করলেও নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শেষে এখন অবস্থান করছেন লক্ষ্মীপুরে। নতুন কমিটি গঠনে শুধু সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা আর দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। এদিকে ত্যাগী ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তৃণমূল। কমিটিতে নারী নেতৃত্বও বাড়ানোর দাবি উঠেছে বর্তমান সময়ে। পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় শঙ্কা-উত্তাপ বিরাজ করছে জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। ওই সময়ে গোলাম ফারুক পিঙ্কুকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর পর অবশেষে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার। জেলা স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বর্ধিত সভা ও তৃণমূলে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, প্রধান বক্তা হিসেবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, বিশেষ বক্তা হিসেবে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে সম্মেলন সফল করতে ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। শহরজুড়ে পদ-প্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। সড়কে সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। এদিকে হঠাৎ করে হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সামছুল আলম বাবুলের বিস্ফোরক মন্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে বিগত ইউপি নির্বাচনগুলোয় শত কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে। যে ভিডিওতে বাবুল বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক নেতা নয়, উনি আসছেন পয়সা কামাতে, তার পেশাই হলো ব্যবসা করা,  তিনি আদম ব্যবসায়ী, কাউকে টাকা ছাড়া মনোনয়ন দেননি, বিগত নির্বাচনে আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছেন, আমি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় মনোনয়ন পাইনি। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করে আমার কথাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।’ একইভাবে বশিকপুর ইউনিয়নে নৌকার টিকিট পেয়ে পরাজিত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদীর কাছ থেকেও শীর্ষ আরেক নেতার ২৬ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ এখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠনে পদ ও বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হওয়ার অভিযোগ আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে শীর্ষ নেতারা ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পদ হারানো ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নেতা। এমন প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী পুরনো নেতাদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কর্মী-সমর্থকরাও ক্ষোভের উত্তাপ আর চরম অসন্তোষে রয়েছেন বলে জানান। সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদে (সভাপতি ও সম্পাদক) অন্তত এক ডজন নেতার নাম আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শাহজাহান, ব্যবসায়ী এম এ হাসেম, বর্তমান সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি, আমরা ক’জন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটওয়ারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ, পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না, প্রকৌশলী খোকন পাল, মোজাম্মেল হক মিলনও আলোচনায় আছেন। জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি বলেন, ‘সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। প্রবীণ-নবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি হতে পারে। দলের প্রয়োজনে শীর্ষ পদে যাকেই পদায়িত করা হয় ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে সবাই কাজ করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু গণমাধ্যমকে জানান, ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ সঠিক নয়, সামছুদ্দিন বাবুলের ভাইরাল হওয়া বক্তব্য আগের, তখন ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে, পরে সংবাদ সম্মেলন করে তা তিনি প্রত্যাহার করেছেন। এখন পরিকল্পিতভাবে একটি পক্ষ তা ছড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।’

 

সর্বশেষ খবর