বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চিকিৎসাসেবা বলতে কিছুই নেই

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

চিকিৎসাসেবা বলতে কিছুই নেই

অপারেশন থিয়েটার আছে, অপারেশনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও আছে। কিন্তু বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে সেখানে কোনো অপারেশন হয় না। বছরের পর বছর তালা ঝুলছে অপারেশন থিয়েটারে। আছে এক্স-রে ও সনোগ্রাফি মেশিন। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও রোগীদের পাঠানো হচ্ছে নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রায় ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করার কথা থাকলেও এর এক ভাগ ওষুধও মেলে না। নিজেদের খেয়ালখুশি মতো হাসপাতালে আসেন চিকিৎসকসহ স্টাফরা। আবার নিজেরা যখন ইচ্ছা তখন চলে যান। দু-একজন চিকিৎসক আবার এক দিন অফিস করেই সপ্তাহ পার করেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দু-একজন চিকিৎসকের একনজর দেখা মিললেও বিকালের পর চিকিৎসক শূন্য হয়ে যায় গোটা হাসপাতাল। এ চিত্র কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ চিকিৎসাসেবা বলে কিছুই নেই উপজেলা হাসপাতালে। হাসপাতালজুড়েই অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব  চলছে। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ হতে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করেন। হাসপাতালটিতে এক্স-রে, সনোগ্রাফি মেশিন, অপারেশন থিয়েটার সবই আছে। কিন্তু নেই শুধু কাক্সিক্ষত সেবা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট কুষ্টিয়ায় উপজেলা পর্যায়ে একমাত্র এই হাসপাতালটিতে সেন্টাল অক্সিজেন ইউনিট ও হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল এই হাসপাতালটি অব্যবস্থাপনার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জোবাইয়া ফারজানা জেরিন প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে একই হাসপাতালে অবস্থান করছেন। নিয়মানুযায়ী যিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাকে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বসবাস করা বাধ্যতামূলক। আরএমওসহ অন্যদের থাকার জন্য এখানে একাধিক কোয়ার্টারও রয়েছে। কিন্তু আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জোবাইয়া ফারজানাসহ যাদের সার্বক্ষণিক হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অবস্থিত আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাস করার কথা কোয়ার্টারগুলো বসবাস করার অনুপযোগী এই অজুহাত দেখিয়ে তিনিসহ অন্যরা সবাই কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করেন। অন্য চিকিৎসকদের অভিযোগ রয়েছে আরএমও ডা. জোবাইয়া ফারজানা নিজেই খেয়াল-খুশিমতো হাসপাতালে আসেন এবং যান। হাসপাতালে ডিউটি পালনের চেয়ে তিনি পাশের উপজেলা ভেড়ামারার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার পেছনেই বেশি সময় অতিবাহিত করে থাকেন। এই প্রতিবেদক বেলা ১২টার সময় আরএমও ডা. জোবাইয়া ফারজানার সঙ্গে দেখা করার জন্য হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার রুমে তালা ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি আসেননি। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) পীযূষ কুমার সাহার কাছে আরএমও ডা. জোবাইয়া ফারজানা কোথায় জানতে চাইলে বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন, আজকে আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।

সর্বশেষ খবর