বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কৃষককে আশা দেখাচ্ছে পলিনেট হাউস

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট

কৃষককে আশা দেখাচ্ছে পলিনেট হাউস

জলবায়ু ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন ‘পলিনেট হাউস’ জয়পুরহাটে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিষমুক্ত ও কীটনাশক ছাড়াই সারা বছর নানা রকম উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা কুসুম্বা ইউনিয়নের ধুরইল গ্রামে এমনই একটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এই চাষ পদ্ধতি কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবজি চাষের জন্য দেশের অন্যতম উপযোগী জয়পুরহাট জেলা মাটি। প্রতি বছর এ জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকম শাক-সবজি ফলমূলের চাষ করেন কৃষকরা। তবে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখ থেকে বাদ যায়নি কৃষি খাতও। এদিকে কৃষিকে বাঁচাতে নতুন নতুন গবেষণা শুরু করেছে সরকারের কৃষি বিভাগ। এরই একটি অংশ ‘পলিনেট হাউস’। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে। যে কোনো আবহাওয়া এতে খারাপ প্রভাব ফেলবে না। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ, পোকা-মাকড়, ভাইরাসজনিত রোগের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে সবজি। দিতে হবে না কোনো কীটনাশক। পাঁচবিবি ধুরইল গ্রামের কৃষক আবদুস ছাত্তারকে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এতে চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম, টমেটো, ব্রোকলি, স্কোয়াশ, স্ট্রবেরি, মেলন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রাসেসলস, লেটুসসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। এর দৈর্ঘ্য ২৫ শতক। এর চারপাশ নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো পোকা-মাকড় ঢুকতে না পারে। এতে উন্নত মানের পলি ওয়াপেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলিপেপার দিয়ে শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে পানি সেচ দেওয়ার আধুনিক প্রযুক্তি। প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেওয়া হয়েছে তাকে। তবে এই টাকা আর শোধ দিতে হবে না। এ পদ্ধতিতে ফসল চাষে ব্যাপক লাভবানের আশাবাদী আবদুস ছাত্তার। কৃষক আবদুস ছাত্তার বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে প্রায় দুই মাস আগে আমাকে বিনামূল্যে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে আসে এটি। এই সবজি হাউসে আমি ক্যাপসিকাম, টমেটো, ব্রোকলি, স্কোয়াশ, স্ট্রবেরি, মেলন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রাসেসলস, লেটুসসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছি। কিছু সবজির চারাও রোপণ করেছি। এতে কোনো সার-কীটনাশক দিতে হয় না। চারদিকে ঘিরে দেওয়ায় কোনো পোকামাকড়ও ঢুকতে পারে না। নিরাপদভাবে এ পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার আশা করছি। পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, পলিনেট হাউসটি এলাকায় ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। এই পদ্ধতি দেখতে ও জানতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে। উচ্চমূল্যের শাক-সবজি উৎপাদনে এটি রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে চাচ্ছি। এ থেকে সারা বছর নিরাপদ ও রোগমুক্ত ফসল পাওয়া যাবে, যা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

 

সর্বশেষ খবর