রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নওগাঁর মিরাটে অযত্নে ৫২ শহীদের বধ্যভূমি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর মিরাটে অযত্নে ৫২ শহীদের বধ্যভূমি

নওগাঁর অবহেলিত বধ্যভূমি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও আজো অবহেলিত নওগাঁর রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ৫২ শহীদের বধ্যভূমিটি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করলেও আজো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে ওই ৫২ শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়রা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে কোনো রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার বা মেরামত না করায় রাস্তাটির বেহাল দশা। বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার বাস্তবায়ন চান শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা। ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া ও শহীদ পরিবারের সন্তান আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত পাল ওই দিনের করুণ হত্যাযজ্ঞের কাহিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বাড়ির নারী- পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে আটকে রাখে। একের পর এক নারীদের ওপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের ওপরে চলে ব্রাশফায়ার। মুহূর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২ জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোনো রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল। প্রদ্যুত পাল আরও জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা, জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহূর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন। হানাদার বাহিনীরা চলে যাওয়ার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোনো রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়িতে যায়। সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক গত ১৯৯৬ সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোনো রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। তাই বধ্যভূমিটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বর্তমানে বধ্যভূমিটির মধ্যে জন্ম নিয়েছে আগাছা। চারপাশ দিয়ে গবাদি পশু চারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রদানের পর সম্প্রতি এই বধ্যভূমিটি আধুনিকায়ন করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় সেই নির্দেশনাটির সব কার্যক্রম পুনরায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন, অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সালে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫২ জন শহীদের আত্মদান স্মরণে বধ্যভূমি সংরক্ষণ, শহীদদের নাম সরকারি গেজেট অন্তর্ভুক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের অসহায় পরিবারকে মূল্যায়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয় কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই শহীদ পরিবারের সদস্যরা ৮ শতাংশ জমি বধ্যভূমিতে দান করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এখন পর্যন্ত কেন বাস্তবায়ন হয়নি সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা সাপেক্ষে এবং এই কাজে জড়িত সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

সর্বশেষ খবর