রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত হবে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বসতভিটা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত হবে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বসতভিটা

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের দত্তপাড়ার বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই আলোকে পুরাকীর্তি ঘোষণার নিমিত্তে মতামত প্রদান ও ভূমি তফসিল পাঠানোর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ শাখার মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে স্বাক্ষরিত চিঠিতে এক ছক পাঠানোর কথা উল্লেখ করে সে অনুযায়ী মতামত প্রদান ও ভূমি তফসিল পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবন ও কর্মের সাক্ষী হিসেবে তাঁর বসতভিটা সম্পর্কে ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় দি অন্টিকিউটিস আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী সংরক্ষণ যোগ্যতা রয়েছে মর্মে সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম গত শুক্রবার রাতে এই চিঠিটি সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িকে পিছনে ফেলে নতুন ভবন উঠতে থাকায় এর সোন্দর্য বিলীনের শঙ্কা থেকে জেলার সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হলে মাঠে নামেন সংস্কৃতিকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, ভবনসহ বাড়িটিকে সরকার যেন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার আওতায় নিয়ে আসে। এরপরই সরকার সোচ্চার হয়। বিষয়টি নজরে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িটি রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট একটি কমিটি সরাইলে এসে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই পরিদর্শনের আলোকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ শাখার মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কোনো পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত ছকে সুস্পষ্ট মতামত ও ভূমি তফসিল প্রয়োজন। বসত ভিটাটি সংরক্ষিত ঘোষণার গেজেট জারি হওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। দি অন্টিকিউটিস আইন ১৯৬৮ এর ১২ ধারা অনুযায়ী চুক্তির মাধ্যমে পুরাকীর্তির অভিভাবকত্ব গ্রহণের বিধান রয়েছে। এ অবস্থায় দি অন্টিকিউটিস আইন ১৯৬৮ এর ১০ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার বিষয়ে প্রেরিত ছকে ভূমি তফসিল প্রতিস্বাক্ষরান্তে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়। জানা গেছে, ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল কালীকচ্ছের দত্তপাড়ার এই বাড়িতে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্ম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। উল্লাসকর দত্ত ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২ মে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আলিপুর বোমা হামলা মামলায় উল্লাসকরের ফাঁসির আদেশ হয়। তবে পরবর্তীকালে এ সাজা পরিবর্তন করে তাঁকে আন্দামানের সেলুলার জেলে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। জেলখানায় তাকে শারীরিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়। এতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯২০ সালে উল্লাসকর দত্তকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। উল্লাসকর দত্তকে পরে ১৯৩১ সালে আবারও গ্রেফতার করা হয় ও তাঁকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর তিনি কালীকচ্ছ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে বিশিষ্ট নেতা বিপিনচন্দ্র পালের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেন। কালীকচ্ছের বাড়িতে ১০ বছর কাটানোর পর তিনি ১৯৫৭ সালে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তিনি শিলচরে যান এবং সেখানেই ১৯৬৫ সালের ১৭ মে মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয়রা জানান, কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদুর রহমানের পরিবার বর্তমানে বসবাস করেন এই বাড়িটিতে। তাঁদের দাবি ক্রয় সূত্রে তারা এই বাড়ির মালিক। নিজেদের প্রয়োজনে পুরাতন ভবনের সামনে নতুন করে ভবন করছেন। বাড়িটি রক্ষায় সরকার কিংবা কেউ এগিয়ে এলে বিষয়টি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান আহমেদুর রহমান।

সর্বশেষ খবর