“আগে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। বগুড়া সীমানা হয়ে গেলে চাঁদা দিতে হয়েছে। চালকরা বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে সড়কে চলাচল করেছেন। টাকা দিলেই ঘুরত গাড়ির চাকা। কয়েকদিন ধরে কেউ চাঁদা তুলছে না”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বগুড়ায় পরিবহন খাত থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। বিভিন্ন রুটে ভাড়া কিছুটা কমেছে জানান যাত্রীরা।
জানা যায়, রাজশাহী ও রংপুরের ১৬ জেলার মধ্যে ১২টির সব ধরনের যানবাহন বগুড়া হয়ে চলাচল করে। এ কারণে বগুড়া জেলায় পরিবহন খাত থেকে চাঁদা তোলার হার সবচেয়ে বেশি। সিএনজি থেকে আন্তজেলা মিনিবাস, বাস, ট্রাক, ঢাকাগামী বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রো-কে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হতো।
সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছিল চাঁদার হারে। পরিবহন চালক ও মালিকরা নীরবে এই চাঁদা দিত শ্রমিক মালিক নেতাদের হাতে। চেইন মাস্টার বসিয়ে শহরের বিভিন্ন মোড়ে তোলা হতো চাঁদা। চাঁদা তোলার পর কথিত নেতারা ভাগবাঁটোয়ারা করে নিতেন। টাকার ভাগ পেতেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও। চাঁদার টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে অনেকের। বগুড়া পরিবহন খাতের প্রায় সব নেতারই রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, আলীশান বাড়ি। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরই তার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তার আলীশান ও স্বেত পাথরের বাড়ি থেকে মালামাল ক্রোক ও জেলহাজতে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়া বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ জেলার ওপর দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ট্রাক ও বাস মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। বাকিগুলো সিএনজি চালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। এসব পরিবহনের অর্ধেকেরই ফিটনেস সনদ নেই। বাজানো হয় হাউড্রোলিক হর্ন। বিআরটিএ সোচ্চার থাকলেও ক্ষমতার দাপটে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি।
বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। বগুড়া সীমানা হয়ে গেলে চাঁদা দিতে হয়েছে। চালকরা বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে সড়কে চলাচল করেছেন। টাকা দিলেই ঘুরত গাড়ির চাকা। কয়েকদিন ধরে কেউ চাঁদা তুলছে না। মামুন হোসেন নামে এক বাসচালক জানান, দিনে ৩০০ টাকা দিতে হতো। এখন চাঁদা দিতে হয় না। চাঁদা ছাড়াই যানবাহন চলাচল করছে। আর আগে চাঁদা না দিলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হতো।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, পরিবহন সেক্টর থেকে কোথাও কোনো চাঁদা উত্তোলনের উপায় নেই। অবৈধ এ কাজের প্রমাণ পাওয়ামাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে।