বগুড়ার বাজারে বেড়েছে মোটা ও মাঝারি চালের দাম। দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ বন্যার কারণে ত্রাণ বিতরণে বিপুল পরিমাণ চালের চাহিদা তৈরি হওয়ায় এমন দাম বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট বানিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা শিকার করে চলেছেন। এদিকে চালের বাড়তি দামের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। ধানের দাম না বাড়লেও দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় আকস্মিক বন্যার কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন মিলার, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার বগুড়ার ফতেহ আলী ও কলোনি বাজারসহ শহরের বিভিন্ন চালের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, মোটা মানের স্বর্ণা-৫, রঞ্জিত ও হাইব্রিড চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও ২৯ চালের কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। বিআর-২৮ জাতের চাল আগে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ কেজির বস্তা কাটারিভোগ চালের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা। এখন তা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে সব ধরনের চালের দামই বেড়ে গেছে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের মোকাম শেরপুর উপজেলা। এখানে আটটি অটোমেটিক রাইস মিল ও বেশ কয়েকজন আড়তদার রয়েছেন। তাদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রয়েছে। কিন্তু তারা বিক্রি করছেন না। আবার বিক্রি করলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে চাল সরবরাহ করছেন। এ ছাড়া বড় বড় করপোরেট কোম্পানির গুদামগুলোতেও পর্যাপ্ত চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া শহরের কলোনি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, হঠাৎ চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু মিল মালিক ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দায়ী। বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে মোটা চালের চাহিদা বাড়ার বিপরীতে এ অঞ্চলে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। আবার মোটা চালের ক্রেতারা বাজারে তাদের চাহিদামতো চাল না পেয়ে মাঝারি মানের চালে ঝুঁকে পড়ায় এসব চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শেরপুরের পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, কোনোরকম ধান চালের সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পাশাপাশি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও বন্যা এবং ত্রাণের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই মুহূর্তে অসাধু ব্যবসায়ীরা ধান চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিদিনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
বগুড়া জেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, বগুড়ার বাজারগুলোতে মোটা চালের সরবরাহ নেই বললেই চলে। সরবরাহ ঘাটতির কারণেই এই মানের চালের দাম বেড়েছে। আর মোটা চালের দাম বাড়ার কিছু প্রভাব পড়েছে মাঝারি চালের বাজারে। এই ধরনের চালের কেজিতেও দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বেচাকেনা হচ্ছে। মিল মালিকরা বলছেন, হাইব্রিড অর্থাৎ মোটা চালের প্রতি কেজিতে ১ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দেশের চলমান বন্যার কারণে চালের বাজারে সাময়িক এই প্রভাব পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চালের দাম কমে আসবে।
উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতিবছর আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয় ১ কোটি ২৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে আরও প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিন চাল উদ্বৃত্ত থাকে।