গাজীপুরে কয়েক দিন ধরে চলা শ্রমিক বিক্ষোভে শিল্পকারখানায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও প্রায় ৩০ শতাংশ কারখানা চালু রাখে মালিকপক্ষ।
পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় সকালেই শুরু হয় কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম। এদিন কোথাও কোনো শ্রমিক বিক্ষোভ বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। গাজীপুর শিল্পপুলিশ ও কারখানা মালিকসূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিতে কয়েক দিন ধরে জেলার কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সালনা, বোর্ডবাজার, শ্রীপুর, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। অনেক সময় কারখানায় ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের মারধরসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল কর্মকাে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। এ সুযোগে কিছু বহিরাগত কারখানায় লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাতে দেখা গেছে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বা ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কারখানাগুলোর কোনোটিতে সাধারণ ছুটি বা কোনোটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন কমেছে। দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট। সে সংকট কাটিয়ে নিতে শুক্রবার খোলা রাখা হয়েছে অনেক কারখানা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কাশিমপুরের সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আগস্টের বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধবার থেকে বিক্ষোভ করছিলেন কারখানার শ্রমিকরা। তারা আশপাশের কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালান। বিক্ষুব্ধ কিছু শ্রমিক পাশের বিগবস করপোরেশন নামে কারখানায় ভাঙচুর ও গোডাউনে আগুন দেন। একইভাবে শ্রমিক অসন্তোষ চলে টঙ্গী, সালনা, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যে কোনো ঝামেলা এড়াতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং এর বাইরে আটটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও ৩০টিতে ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। তিনি আরও বলেন, মূলত শুক্রবার পোশাক শ্রমিকদের ছুটির দিন। কিন্তু গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতেই মালিকপক্ষ কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল পুরো জেলায় প্রায় ৩০ ভাগ কারখানা চালু ছিল। তবে যে আটটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেগুলো গতকালও বন্ধই ছিল। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০। এসব কারখানায় শ্রমিক কাজ করেন প্রায় ২২ লাখ।