পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও জেলা। সদর উপজেলা ছাড়া অন্য চারটি ভারত সীমান্তঘেঁষা। এসব উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় কাজে আসেন জেলা শহরে। জেলায় রয়েছে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। সরকারি এ চিকিৎসালয় ছাড়াও ঠাকুরগাঁও শহরে যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক। এগুলোর বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে চিকিৎসাসেবা।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জেলায় তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৬৬টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৩৭টি এবং ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ১২৯টি। নিয়ম মেনে পরিচালনা না করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২২টি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেছে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো নবায়ন করা হয়েছে ২০১৮-২০১৯ থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের আগে। অনুসন্ধানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনোটির নবায়ন করা লাইসেন্স পাওয়া যায়নি।
পৌরশহরের কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘণ্টা একজন ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা থাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। অনুমোদনের চেয়ে রাখা হয়েছে বেশি শয্যা। অস্ত্রোপচারের সময় ডেকে আনা হয় চিকিৎসক। একই উপকরণ ব্যবহার করা হয় অধিকাংশ অস্ত্রোপচারে। অনেক সময় থিয়েটারে থাকেন আয়া বা ওটি বয়। তারা সেলাই করার কারণে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় রোগীকে।
পৌর শহরের একটি ক্লিনিকে বোনকে সিজারিয়ান অপারেশন করিয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বোনের সিজার করার পর পেটে গজ রেখে দিয়েছিল। পরে ইনফেকশন হয়। দিনাজপুর গিয়ে আবার পুনরায় অপারেশন করাতে হয়েছিল। শরিফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, শহরের হাসান জেনারেল হাসপাতালে আমার স্ত্রীর সিজার করিয়েছি। তাদের সঙ্গে ১৩ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল। অপারেশন শেষে তারা ১৮ হাজার ২০০ টাকা চান এবং খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনায় আমি ভোক্তা অধিকারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা নেই মাম হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বাবলু বলেন, আমরা টাকা জমা দিয়েছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নবায়ন হবে আশা করছি।
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ সামসুজ্জোহা চৌধুরী বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কয়েক অর্থবছর ধরে নবায়ন করা হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরে কথা বলেছি। যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন নেই এবং অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে চলে না সেগুলো বন্ধ করে দেব।