ফেনী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে শিশু রোগী ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দিসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এসব শিশু। ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে, বলছেন চিকিৎসকরা। সক্ষমতার ৪ গুণের বেশি রোগী বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে। ফলে শিশু ওয়ার্ডে তৈরি হয়েছে তীব্র চাপ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যা ২৬টি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ভর্তি ছিল ১০৫ শিশু। চাপ সামাল দিতে বেডের পাশাপাশি মেঝে, করিডরে রাখতে হচ্ছে এসব শিশুকে। এ অবস্থায় হাসপাতালজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের সংকট। চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক কর্মীদের ওপর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। সেবার পাশাপাশি ওয়ার্ডে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়ে উঠেছে চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত চাপ মোকাবিলায় অস্থায়ী বেড বৃদ্ধি, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ এবং পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়টিতে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ঠান্ডা-ধুলাবালি এড়িয়ে চলা এবং ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।
ছাগলনাইয়া উপজেলার রুহতিয়া থেকে তিন মাসের তাকরীম নুরকে নিয়ে আসা মা তানজিনা আক্তার বলেন, ‘শিশুর ঠান্ডা ও কাশি। অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে বেড না পেয়ে প্রথম দিন মেঝেতে রাখতে হয়েছে। রোগী বেশি, কষ্ট হচ্ছে।’
রাধানগর ইউনিয়ন থেকে এক বছরের সাইমুমকে নিয়ে আসা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছেলে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। করিডরে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
তিন দিন ধরে মেঝেতে চিকিৎসাধীন সোনাগাজী উপজেলার কুঠিরহাটের শিশু রাজ দাশের ঠাকুরমা সূর্য রাণী বলেন, ‘রোগী বেশি, জায়গা কম। আরও কিছু বেড আর লোকবল থাকলে ভালো হতো।’
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফনার্স তানিয়া সুলতানা রুমা বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা নির্ধারিত বেডের কয়েক গুণ। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে একসঙ্গে এত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশুদের নিরাপদে রাখা এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। শিশুদের ঠান্ডা, পানি ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাসি বা খোলা খাবার খাওয়ানো যাবে না। তাজা ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালেও জনবলসংকট রয়েছে, তার পরেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’