শিরোনাম
২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ১৫:১৯

সিরাজগঞ্জে চাল নিয়ে যত অনিয়ম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জে চাল নিয়ে যত অনিয়ম

দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ফেয়ার প্রাইসের চাল নিয়ে অনিয়মটা শুরু হয় তালিকা তৈরীর সময় থেকে। শুরুতেই কালোবাজারির পরিকল্পনা করে ফেয়ার প্রাইস প্রকল্পের সাথে জড়িতরা। যে কারণে প্রথমেই তালিকাতে মৃত-ভুয়া-অপরিচিত-ধনী-স্বচ্ছল ও ডিলার-ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিকটাত্মীয়-স্বজনদের নাম অন্তভুর্ক্ত করা হয়। এতে বাদ পড়ে যায় অনেক হতদরিদ্র পরিবার। এরপর চাল বিতরণ শুরু হলে ধীরে ধীরে অনিয়মের বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। ফুঁসে ওঠে বঞ্চিতরা। কালোবাজারি করতে গিয়ে ধরা পড়ে অসাধু ডিলাররা-ইউপি সদস্য-চেয়ারম্যান। 

অধিকাংশ ডিলার সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কোথাও কোথাও অনিয়মগুলো ম্যানেজ করা হয় আবার কোথাও ম্যানেজ না হওয়ায় ডিলারশীপ বাতিলসহ মামলা হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। 

জানা যায়, ফেয়ার প্রাইজ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৮৩টি ইউনিয়নে ১৬৫ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। প্রতিজন ডিলার ৫০০ কার্ডধারী দরিদ্র মানুষের মাঝে সপ্তাহে শুক্র-শনি ও মঙ্গলবারে ১০ টাকা করে মাসে ৩০ কেজি চাউল বিক্রি করবে। কিন্তু অনেক স্থানে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। দরিদ্রদের মাঝে সামান্য চাল বিতরণ করে বাকি চাল ভুয়া-মৃত-নিকটাত্মীয় ব্যক্তিদের নামে উত্তোলন দেখিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। 

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বেলকুচির রাজাপুর ইউনিয়ন থেকে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রির সময় ৬৫ বস্তা চালসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ সেখ তালিকায় মৃত  ৪ জনের নাম সংযুক্ত করেন এবং ডিলারকে ফাঁসানোর জন্য তার পছন্দের ব্যক্তিদের চাল নিতে বাঁধা দিয়ে ডিলারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করান। 

বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ডিলার ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারের বিক্রির সময় ২৭ বস্তা চাল  ভ্রাম্যমাণ আদালত জব্দ করেন। পরে তার ডিলারশীপ বাতিল করেন। শাহজাদপুর উপজেলায় ডিলার নিয়োগ থেকে কার্ড ও চাল বিতরণ সবখানে অনিয়ম চলছে। বেলতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস হোসেন ফুল জানান, তার ইউনিয়নের এক ডিলার এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে কার্ড বিতরণ শেষ করেনি। তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। 

সোনাতুনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ফজলু জানান, কীভাবে তালিকা করা হয়েছে, কোথায় চাল বিতরণ করা হচ্ছে কোন ডিলার তাদের জানায়নি। মুলত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভায়রা ডিলারশীপ নিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের অভিযোগ এক হাজার ভুক্তভোগীর মধ্যে অর্ধেকও বিতরণ করা হয়নি। 

বেলতৈল ইউনিয়নের চরকাদই গ্রামের হতদরিদ্র তাত শ্রমিক সেলিম হোসেন জানান, তার নামে কার্ড হয়েছে, সে প্রথম দফায় একবার চালও পেয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয় দফায় চাল তুলতে গেলে চাল দেয়া হয়নি। এছাড়াও তালিকাতে পুলিশ অফিসারের বাবা-ইঞ্জিনিয়ারের পরিবারের সদস্যসহ বিত্তবানদের নাম দিয়ে সেগুলো উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। 

সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নামের তালিকায় মৃত ব্যক্তি, সরকারি চাকুরিজীবী, রাজনীতিবিদ, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি, বিদেশে বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীদের নামও রয়েছে। ৬নং ওয়ার্ডের অলিদহ গ্রামের আব্দুল কাদের পাশা (কার্ড নং ৫৯৭)-এর ছেলে বিদেশে চাকুরী করে। অথচ প্রতিবেশি মালা নামের এক অন্ধ নারীর নাম ওই তালিকায় নেই। 

মামুনুর রশিদ (কার্ড নং ৫৯৯) চাকুরিজীবী, বসতবাড়ী পাকা, আলাউদ্দিন (কার্ড নং-৬০৯) একজন বিত্তশালী। (৬৪০ নং কার্ড) ধারী ঠান্ডু একজন ধনী ব্যক্তি। অথচ বাড়ির পাশেই রয়েছে ভিক্ষুক হযরত আলী কার্ড থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ৭নং ওয়ার্ডের বাদেকুশা গ্রাামের ধর্নাঢ্য জাহিদুল (কার্ড নং ৬৬৮), কোরবান আলী (কার্ড নং-৬৬৯), জব্বার আলী (কার্ড নং- ৬৭০), জয়ধর আলীর (কার্ড নং- ৬৭২) বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। 

৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আব্দুল কাদের (কার্ড নং ৬৮২), শুধু তাই নয়, আব্দুল জাব্বারের ছেলে আব্দুল ছালাম (কার্ড ৬৮৬) সরকারি চাকুরিজীবী। অথচ তার বাড়ির প্রতিবেশি দরিদ্র জয়গন কার্ড পায়নি।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, রহমত আলী, হাবিবর রহমান জানান, নামমাত্র কয়েকটি কার্ড দরিদ্রদের দেয়া হয়েছে। আর সব কালোবাজারি করা হয়েছে। ডিলার প্রভাবশালী ও চেয়ারম্যানের আত্মীয় হওয়ায় কেউ মুখ খুলছে না। একই অবস্থায় প্রায় জেলার সবগুলো ইউনিয়নে। এ অবস্থায় হতদরিদ্ররা সঠিকভাবে কার্ড বিতরণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানান, ধনী-মৃত ব্যক্তির নাম শনাক্তের জন্য ইতোমধ্যে নয় উপজেলার সব তালিকা নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। এছাড়াও অনিয়ম ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। সকল ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বর ও ডিলারদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। 

 


বিডি প্রতিদিন/২৮ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর