শিরোনাম
১৭ জুলাই, ২০১৯ ১৩:৩৪

মান্দায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫শ' পরিবার পানিবন্দী

নওগাঁ প্রতিনিধি:

মান্দায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫শ' পরিবার পানিবন্দী

উজান থেকে নেমে আসা এবং গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

মান্দার আত্রাই নদীতে আজ বুধবার সকাল থেকে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, মান্দায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ভোর রাতে শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাজরভাঙা বেড়িবাঁধ ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা বস্তা ও বাঁশ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়া মদনচক, উত্তর লক্ষ্মীরামপুর, বানডুবি, বাগাতিপাড়া, জোতবাজার, গোয়ালমান্দা, পারনুরুল্লাবাদ, কালিকাপুর, কামারকুড়ি, ছোটবেলালদহ, খুদিয়াডাঙ্গা, বুড়িদহ, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোকাহাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বটতলা বাজার, দ্বারিয়াপুর বেড়িবাঁধ, খুদিয়াডাঙ্গা পূর্বপারসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পাহারা দিচ্ছেন। এসব এলাকার মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আর সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে দুইধারের মাটি কেটে গিয়ে বাঁধগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এসব পুরাতন বাঁধে রয়েছে ইদুরের অসংখ্য গর্ত। নদীর পানির চাপের ফলে এসব গর্ত দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে এক সময় বাঁধ ভেঙে যায়। শুষ্ক মৌসুমে এসব স্থান সংস্কার করা হলে বর্ষা মৌসুমে অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারতেন স্থানীয়রা।

মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধিতে শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চকরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমধার, কয়লাবাড়ি ও বটতলা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি মান্দা উপজেলার জোতবাজারে বিপদ সীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও পত্নীতলার উপজেলার শিমুলতলীয় ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অবহাওয়া পরিষ্কার হলে বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 

মান্দা উপজেলার কসবা ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৬-৭ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পরেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বাঁধের অন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে তদারকি করছেন পাউবোর লোকজন ও স্থানীয়রা। বাঁধ টিকিয়ে রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগামিকাল বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা একেএম মান্নান বলেন, যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের ২শ' টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার (চাল, ডাল, চিনি, তৈল, চিড়া, মোমবাতিসহ আনুষঙ্গিক) মজুদ আছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।

নওগাঁ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সব জায়গায় খোঁজ-খবর রাখছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার পানি কমতে শুরু করেছে। ওই পানি এদিকে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কমতে শুরু করবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর