১৭ জুলাই, ২০১৯ ১৪:৪০

কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

পানির চাপ কমাতে খোলা হল ১৬ গেইট

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি:

কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি। তাই পানির চাপ কমাতে খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১৬টি গেট। 

অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল আর বন্যায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার। একই সাথে ঘোলা, ময়লার কারণে দূষিত হয়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। তাই এ পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা উপড়ে পড়া গাছ-গাছালি, লতাগুল্ম ও বিস্তর কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে সৃষ্টি করেছে ভাসমান জঞ্জালও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  রাঙামাটি জেলা বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলা ও কালাপাকুজ্জা, গুলশাখালী, বগাচতর, গাথাছড়া, ভাসান্যাদম, মাইনীমুখ, বালুখালী, আদারক ছড়া ইউনিয়ন বসবাসরত পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। 

হ্রদ তীরবর্তী গ্রামের রাস্তা গৌ-চারণ ভূমি, শুটকি মাছ শুকানোর স্থানসহ মানুষের বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। ওই অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ  পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসলি জমি। বোরো ধান, কাকরল, শষা ও কাঁচা মরিচের বাগানও। রাঙামাটি শহর এলাকাতেও হ্রদের পানি উত্তোলন করে সরবরাহ দেয়া হয়। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ঘোলা, ময়লাযুক্ত ও দূষিত হয়ে এসব পানির উৎস ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি কাদাযুক্ত পানি ভূ-গর্ভে প্রবেশ করায় রিংওয়েল এবং নলকূপগুলো থেকেও ঘোলা পানি বেরিয়ে আসছে। 

দূষিত পানির কারণে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। 

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী বাড়ি ঘরগুলো পাহাড়ি ঢলে বেশি প্লাবিত হয়েছে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও কমে যাবে। তবে যারা এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পরেছে। তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানির চাপ কমাতে ১৬টি গেইট দেড় ফুট খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব গেইট দিয়ে পানি নামছে ২৭ হাজার কিউসেক গতিতে। বুধবার সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী এটিএম আব্দুল জাহেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় রাখতে এ গেইট খোলা হয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে ভারিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে রাঙামাটিতে। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলও। তাই হ্রদের পানি আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এ হ্রদে পানি  ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল) পর্যন্ত। বর্তমানে হ্রদের পানি রয়েছে ১০৬.৭৮ মীন সী লেভেল (এমএসএল)। তাই কাপ্তাই বাঁধের উপর পানির চাপ কমাতে গেইটগুলো খোলা রয়েছে। 

তবে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট সচল রয়েছে। বিদ্যুৎও উৎপাদন হচ্ছে ২১২ মেগা ওয়াট। 

অভিযোগ রয়েছে, রাঙামাটি কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেইট খোলার কারণে তলিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়াখালী ও পটিয়াসহ বেশকিছু নিম্নাঞ্চল। কর্ণফুলী নদীতে স্রোতের চাপ বাড়ছে। তাই নৌযান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করেতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর