১৭ জুলাই, ২০১৯ ২০:১০

বাবার কোলে চড়ে ও বাম হাতে লিখে এইচএসসি পাস নাইচের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বাবার কোলে চড়ে ও বাম হাতে লিখে এইচএসসি পাস নাইচের

অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল ঠিক থাকলে স্বপ্নগুলো এক সময় বাস্তবে রূপ নেয়। এমনটাই করে দেখিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার প্রতিবন্ধী দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুন। 

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সে এবার বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৭৫ পেয়ে পাস করেছে। সে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। নাইচ খাতুনের দুটো পা থাকলেও সে গুলোতে বল পায় না। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাঁ হাত। বাঁ হাত দিয়ে লিখেই সে পাশ করলো।
 
শারীরিক প্রতিন্ধকতার কাছে হার না মানা নাইচ খাতুন বাবার কোলে চড়ে গত ১ এপ্রিল ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। 

শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে হাসি মুখেই জয় করেছে সে। বা হাতের শক্তি ও মনোবল নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে নাইচ। রাত-দিন পরিশ্রম করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

নাইচ খাতুনের বাড়ি ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা গ্রামে। তার বাবা নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক ও মা আকতার জাহান গৃহিনী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইচ ছোট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা ফসলি জমির ওপর চলে লেখাপড়া ও সংসার।

নাইচ খাতুনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও একটি হাত অচল। একারণে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। তারপরও সে লেখাপড়া করতে চায়। তাই তার মা ছোট থেকেই নাইচকে কোলে তুলে নিয়ে বিদ্যালয় ও কলেজের বেঞ্চে বসে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আবার একই ভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এভাবেই সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫৫ পেয়েছে। 

পরে ২০১৯ সালে ২.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষাতেও পাশ করেছে সে। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তাকে লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও মেয়ের স্বপ্ন পুরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নাইচের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি।

নাইচ খাতুন বলেন, আমি কারো মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল নিয়ে বাম হাত দিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে এবার এইচএসসি পাশ করেছি। এভাবেই কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। 

বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর