১৮ জুলাই, ২০১৯ ২০:১১

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ:

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রতিদিন যমুনার পানি বাড়ছে-সাথে বাড়ছেও মানুষের দুর্ভোগ। মাত্র ছয় থেকে সাতদিনে সিরাজগঞ্জ জেলার ৩৬টি ইউনিয়নের ২৭৭ গ্রামসহ দুটি পৌরসভার প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী অবস্থায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। রান্নাঘরসহ চুলা তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করতে না পেরে অনেকে একবেলা খেয়ে দিনপার করছে। 

টাকা না থাকায় শুকনা-তরল খাবার কিনতে না পারায় ছোট ছোট শিশুদের খাদ্যকষ্টে ভুগতে হচ্ছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ল্যাটিন তলিয়ে যাওয়ায় নারীদের দুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সারাক্ষণ পানির মধ্যে থাকায় হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কাওয়াকোলা ও মেছড়া, খাসরাজবাড়ী ও মুনসুরনগরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। আশ্রয় নেয়ার মতো উচু জায়গা না থাকায় চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা তলিয়ে ঘরে চকি উচু করে এক ঘরের মধ্যে অনেকে ওয়াপধা বাঁধে ঝুপড়ি তুলে শিশু সন্তানসহ গরু-ছাগল-হাস মুরগী নিয়ে এক ঘরে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করছে। খোকশাবাড়ী, পুঠিয়া বাড়ী, কাটেঙ্গা ও মেছড়া ও ভাটপিয়ারীসহ কয়েকটি গ্রামের বন্যাকবলিতদের অভিযোগ, দুর্ভোগে থাকলেও সরকারের পক্ষে প্রশাসন বা ইউপি মেম্বর-চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। কিছু কিছু স্থানে দশ কেজি করে চাউল দেয়া হলেও অধিকাংশ বন্যা কবলিতরা বঞ্চিত রয়েছে। 

এদিকে সরকারী তথ্য মাত্র সাতদিনের বন্যায় ইতোমধ্যে দেড়-দুই হাজার পরিবার সম্পন্নভাবে ঘরবাড়ি-বসতভিটা হারিয়েছে ফেলেছে। আর প্রবল স্রোতের কারণে প্রায় ৩০ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পুন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পানির নীচে রয়েছে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট হাজার হেক্টর জমির ধান-পাট ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, পানি বাড়ার সাথে কিছু এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার কাজিপুরে খাসরাজবাড়ী বাজারে বন্যার পানিতে  তলিয়ে থাকা প্রায় ২০টি বসতবাড়ী-দোকানপাট মালামালসহ যমুনায় ঢেবে গেছে। সর্বস্ব খুইয়ে মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়াও এনায়েতপুরের আড়কান্দি ও চৌহালীর খাসপুকুরিয়া এবং কাজিপুরের শুভগাছা, পাটাগ্রাম, সদর উপজেলার কাওয়াকোলাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। পানির প্রবল চাপের কারণে শহরসহ উপজেলা রক্ষাবাঁধগুলোও হুমকিতে রয়েছে। 

খাসরাজবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জানান, তিনদিন আগে খাসরাজবাড়ী বাজারে পানি ওঠে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে ভাঙ্গন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে ভাঙ্গনে দোকান-পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালামালসহ ঢেবে যায়। ওই বাজারের হোসেন মিয়া, কোববাত আলী, রহিম ও নুরু জানান, পানির নীচে যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তা আমাদের জানা ছিল না। হঠাৎ করে দুপুরে দোকানপাট ঢেবে যেতে শুরু করে।  চোখের সামনে সবকিছু ঢেবে গেলো। দেখা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। 

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, সরকার বন্যা কবলিতদের পাশে সবসময় রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত সব উপজেলায় ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ ও বিতরণ শুরু হয়েছে। হয়ত কোন কোন এলাকায় বিতরণ করতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সব বন্যা কবলিতরা ত্রাণ সামগ্রী পাবে। 

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর