শিরোনাম
২০ জুলাই, ২০১৯ ১৫:০৩

নেত্রকোনায় ব্যাগে শিশুর কাটা মাথা: পুলিশের সতর্কীকরণ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনায় ব্যাগে শিশুর কাটা মাথা: পুলিশের সতর্কীকরণ

নেত্রকোনায় শিশুর কাটা মাথা নিয়ে ব্যাগ বহনকারী রবিনকে উত্তেজিত জনতা পিটিয়ে হত্যার পর থেকে জেলার সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত তিন দিনে বিভিন্ন স্থানে সন্দেহজনকভাবে অপরিচিত নেশাগ্রস্থ যুবকদের আটকাচ্ছে জনতা।

এদিকে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম স্কুলগুলোতে এবং মসজিদে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে সন্দেহভাজনদের পুলিশে দিতে অনুরোধ করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের পারলা এলাকায় এক যুবককে সন্দেহ হলে জনতা আটাকায়। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসে। যুবকের নাম জীবন (২০)। সে ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদামের বাবুল মিয়ার ছেলে অটো চালক। তার কাছ থেকে পুলিশ ড্যান্ডি জাতীয় নেশা উদ্ধার করেছে। 

এদিকে মডেল থানায় আরেক আটককৃত ফারুক (৪০) নামের যুবক পরিচয় দিচ্ছে কখনো তার বাড়ি ঢাকার পল্টন আবার কখনো বলছে কুমিল্লার লাঙ্গলকোট। সদরের মডেল থানার উপ পরিদর্শক এস আই আউয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এমন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন জনকে আটকের পর নাম দিচ্ছে। এরা একেকবার এক এক নাম ঠিকানা বলছে। 

এছাড়া একই সময়ে দূর্গাপুর উপজেলার সাধুপাড়া এলাকায় টিএস খান (১৭) নামের এক কিশোর আটক হয়েছে। সে ভিক্ষা করতে গেলে এক বাড়িতে ওই নারীর সন্দেহ হলে আশপাশের বাড়ির লোকজন ধরে দিয়ে পুলিশ ডেকে থানায় দেয়। অন্যদিকে আটপাড়ার সুতারপুর মাদ্রাসার পাশে রাত তিনটার দিকে অপরিচিত দুই যুবককে এলাকাবাসী ধাওয়া করে। তারা পুকুরে ঝাপ দিলে এদেরকে ধরে এনে গাছের সাথে বেধে রেখে সকালে পুলিশে দেয়। 

এসব ঘটনায় সারা জেলার মানুষের মধ্যে ভীতি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কলমাকান্দার আনন্দপুর গ্রামের তিন সন্তানের জনক-জননী নয়ন আহমেদ ও ফরিদা আক্তার বলেন, শুনেছি গ্রামের বাড়ি ঘরের আশপাশে এমন কিছু লোক ঘুরে। আমাদের তো পিঠাপিঠি তিন ছেলে। গ্রামের বাড়িতে নেই কোন দেয়াল। এদেরকে রেখে ঘরের কাজ করার সময় যদি একটাকে নিয়ে যায় কে দেখবে। 

এদিকে এসব ঘটনায় শনিবার সকালে সাতপাই আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে সমাবেশ করেছে জেলা পুলিশ। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম সকলকে সতর্ক থাকার এবং গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি জামে মসজিদে নামাজ শেষে সতর্ককরণ বক্তব্য রাখেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে শহরের সুইপার কলনির পাশে হাতে ব্যাগ নিয়ে মদ্যপান করে ঘোরার সময় জনতা ব্যাগধারীকে ধাওয়া করেল নিউটাউন এলাকার অনন্তপুকুরপাড়ে তাকে আটক করে। এসময় ব্যাগে তল্লাশি করে একটি খন্ডিত মাথা পেলে উত্তেজিত জনতার হাতে ব্যাগ বহনকারী রবিন নিহত হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে নিয়ে যায়। এসময় কিছু পুলিশকেও ধাওয়া করে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ খন্ডিত মাথার সাথে থাকা বরফের মতো জিনিস সহ কিছু মেডিসিন উদ্ধার করে। 

বিকালে কাটলি এলাকার মোশারফ হোসেনের নির্মানাধীন তিনতলা বিল্ডিংয়ের টয়লেট থেকে গোয়েন্দা পুলিশ শিশুর শরীরের কাটা বাকী অংশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামল হয়েছে। 

পুলিশ জানিয়েছে এটি একটি শুধুই হত্যাকাণ্ড। এর সাথে পদ্মা সেতুর কোন মিল নেই। একটি মহল বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে অস্তিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে শিশু হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত নির্মম বর্বরতা। এ ব্যাপারে  জেলা পুলিশ শুক্রবার প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য দেন।

পরবর্তীতে সন্দেহজনকভাবে ৫ জনকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করলেও জিজ্ঞাসা শেষে তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এছাড়া নতুন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর পিছনে কোন কারণ আছে কিনা সরকারকে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। কারণ বিভিন্ন এলাকায় রাত বিরাতে কেন যুবক তরুণরা ঘুরবে? জনতা যাদেরকে আটক করছে তাদেরকে সন্দেহ হচ্ছে বলেই। সব জনতার হাতে তো ফেইসবুক থাকে না। সবাই যে ফেইসবুক দেখে ধাওয়া করছে এমন না। বেশিরভাগই একদম গ্রামের মানুষ। শোনা যাচ্ছে আটক হচ্ছে যারা তাদের বেশিরভাগই নেশাগ্রস্ত এবং দেশের বিভিন্ন  জেলার। তাহলে এর পিছনে অন্য কোন চক্র আছে কিনা তা বের করা লাগবে। 


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর