২৩ জুলাই, ২০১৯ ১৬:৪২

রংপুরের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

রংপুরের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে

বন্যায় রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আউশ, আমন বীজতলা, রোপা আমন, পাট, শাকসবজি, মসলা জাতীয় ফসল, তিল, কলা, আখ এবং পানবরজের ক্ষতি হয়েছে। বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে চারা রোপণসহ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৩ হেক্টরে ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। এর মধ্যে চলতি বন্যায় পানির নিচে যায় ৩২ হাজার ১১৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল। মঙ্গলবার রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

যেসব উপজেলার ফসল পানির নিচে রয়েছে সেগুলো হলো- রংপুরের কাউনিয়া, গংগাচড়া, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, তারাগঞ্জ। গাইবান্ধার সদর, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি। কুড়িগ্রামের সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রজিবপুর, ভূরাঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, রাজারহাট। লালমনিরহাট জেলার সদর, আদিতমারী, কালিগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম এবং নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা। 

রবিবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়- বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনো চারদিকে পানি আর পানি। জেগে ওঠা ধানক্ষেতের বেশির ভাগই ঢাকা পড়েছে স্রোতে ভেসে আসা বালুতে। 

মহিপুর এলাকার কৃষক ছয়ফল হোসেন জানান, এ বছর তিনি ৪৫ শতক জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছিলেন। প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সব পানিতে তলিয়ে যায়।

একই এলাকার আলী হোসেন ৫০ শতক এবং মনা মিয়ার ৩০ শতক জমিতে লাগানো ধানের চারা সম্পূর্ণ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারা জানান, বালুতে ঢাকা পড়া ক্ষেতগুলোতে এ বছর আর ধানের চারা লাগানোর সুযোগ নেই।

রংপুরের কাউনিয়ার গণাই চরের কৃষক সফি, আবাস জানান, তারা ধারদেনা করে আমন বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন। প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সব পানিতে তলিয়ে যায়।

জানা যায়, রংপুরে আউশ আবাদ হয় ১ হাজার ৮৫৬ হেক্টর, আমন বীজতলা ৮ হাজার ৬৮৫ হেক্টর, রোপা আমন ৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর, পাট ৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর, শাকসবজি ৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, মসলা জাতীয় ৪ হাজার ৪৫৫, তিল ৩৫ হেক্টর, কলা ১ হাজার ৭০ হেক্টর, আখ ৮২৮ হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট আবাদ ৩৩৫৫৯ হেক্টর। গাইবান্ধা ১০ হাজার ৮৫৩ হেক্টর, আমন বীজতলা ৬ হাজার ৮৩২ হেক্টর, রোপা আপন ৬৩ হেক্টর, পাট ১২ হাজর ৫৬৫ হেক্টর, শাকসবজি ৪ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল ১ হাজার ১০৫ হেক্টর, তিল ১৩৮ হেক্টর, কলা ৩৯০ হেক্টর, আখ ৬১৯ হেক্টর, পানবরজ ২১৬ হেক্টর। মোট ৩ হাজার ৭১৬৬ হেক্টর। কুড়িগ্রামে আউশ ৭ হাজার ৮৬৩ হেক্টর, আমন বীজতলা ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর, পাট ১৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর, শাকসবজি ৩ হাজার ৯৩৩ হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল ১ হাজার ৪৩২ হেক্টর, তিল ১৬৭ হেক্টর, কলা ৩৬৫ হেক্টর, আখ ৭১৮ হেক্টর। মোট আবাদ হয় ৩৬ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে। লালমনিরহাটে আউশ ৩ হাজার ৩০৮ হেক্টর, আমন বীজতলা ৫ হাজার ৪২ হেক্টর, রোপা আমন ৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর, পাট ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর, শাকসবজি ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর, তিল ৭ হেক্টর, আখ ৫৮ হেক্টর। এ জেলায় মোট ২৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে ১০টি ফসল আাদ করেন কৃষক, এবং নীলফামারী জেলায় আউশ ১ হাজার ১৭৮ হেক্টর, আমন বীজতলা ৬ হাজার ২৩১ হেক্টর, রোপ আমন ৬ হাজার ১৯২ হেক্টর, পাট ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর, শাকসবজি ৫ হেক্টর, মসলা জাতীয় ফসল ২ হাজার ৫৪১ হেক্টর, কলা ১৮০ হেক্টর, আখ ১০৩ হেক্টর। এতে মোট ২১ হাজার ৮৩০ জমিতে ১০ প্রকারের ফসল আবাদ হয় । বিভাগের ৫ জেলায় মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৩ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এবারের বন্যায় রংপুরে আউশ ৩০, আমনবীজতলা ২৮ দশমিক ৫, রোপা আমন ১৮ দশমিক ৫ এবং ২৮ হেক্টর জমির শাকসবজি পানির নিচে রয়েছে। গাইবান্ধায়-আউশ ২ হাজার ৭৫৭, আমন বীজতলা ২ হাজার ১৯৭, রোপা আমন ২৫, পাট ৫ হাজার ৯৫০, শাকসবজি ৮৭৬ এবং ৫০ হেক্টর জমির তিল পানির নিচে। কুড়িগ্রামে আউশ ৫ হাজার ৯৬৩, আমন বীজতলা ২ হাজার ৮৯১, পাট ৮ হাজার ১০৫, শাকসবজি ১ হাজার ৯৬২, মসলা জাতীয় ফসল ৫৪৭ এবং কলা ১৭০ হেক্টর পানির নিচে আছে। লালমনিরহাট জেলায় রয়েছে আমন বীজতলা ৩২৫ হেক্টর। 
নীলফামারীতে আউশ ১২ দশমিক ৫, আমন বীজতলা ৭২ দশমিক ৭, রোপা আমন ৩, পাট ৭, শাকসবজি ২৫ এবং মসলা জাতীয় ফসল শূন্য দশমিক ৭ হেক্টর। মোট ৩২ হাজার ১১৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রংপুর অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় ৩২ হাজার ১১৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানা যায়নি। তবে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর