১৭ আগস্ট, ২০১৯ ২০:২২

ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে কর্মে ফিরছেন মানুষ

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে কর্মে ফিরছেন মানুষ

বগুড়া থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার যাত্রীবাহী বাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কটের সাথে ভোগান্তি বেড়েছে কর্মে ফেরা মানুষগুলোর। বাস সঙ্কটের কারণে ভোগান্তি আর মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে কর্মজীবীদের।

এতে ভোগান্তি বেড়ে ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ঢাকাগামী যাত্রীদের। ঈদের আগে আগাম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪শত টাকা করে। তারপরও টিকিট না পেয়ে কর্মজীবী মানুষগুলো ট্রাকে, বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে ভোগান্তি নিয়েই ফিরে যাচ্ছে।

জানা যায়, বগুড়া ও উত্তরঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বাসের ফিরতি টিকেট ঈদের আগে আগাম বিক্রি করা হয়। ঈদের আগেই ফিরতি বাসের টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ায় আগাম টিকেট কাটতে পারেনি অনেক কর্মজীবী। টিকেট কাটতে না পেরে বিভিন্ন থানা রুটের বাস যোগে ঢাকা কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে কর্মজীবীদের। কিন্তু সে বাসের টিকেট করতে হচ্ছে ৫ শত থেকে ৬০০ টাকা করে। পরিচিতি পরিবহনগুলোর টিকেট নেই। ঢাকাগামী বাস বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, চারমাথা, তিনমাথা, বনানী, শেরপুর, মাটিডালি, মোকামতলায় যাত্রীর উপচেপড়া দেখা গেছে। বাসের টিকিট না পেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা এখন ট্রাক অথবা পিকআপ ভ্যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে চলেছে পরিবার পরিজন নিয়ে। 

এদিকে শহরের বনানী বাস্ট্যান্ডে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পিকআপ ভ্যান অথবা ট্রাকের উপর সামিয়ানা, ত্রিপল টানিয়ে পাটাতনে বসে গন্তব্য স্থলে যাচ্ছে। বগুড়া শহরের সবকটি বাসস্ট্যান্ডে ঈদের পর ছিল কর্মজীবী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কষ্ট হলেও লোকাল বাস, বাসের ছাদ ও ট্রাকে করে ফিরছে মানুষ।

বগুড়ায় পরিচিত বাস কাউন্টারে ঈদে প্রতি সিট ভাড়া ৪৫০ টাকা, এসি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং হুন্দায় ১৫০০ টাকা করে নির্ধারণ করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।

বগুড়ার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, পরিবহন শ্রমিকরা ইচ্ছেমত বাসের টিকিট বিক্রি করছেন। কোনো নিয়ম নীতি নেই। কথা বলতে গেলেই তারা যাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করছে। কোনো কোনো শ্রমিক আন্দোলনের মত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই যেন। বাসের সিটে ও মাঝখানে কাঠের ব্রেঞ্চ, চেয়ার বসিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে বাসগুলো। 

একই চিত্র দেখা যায় শহরের ঠনঠনিয়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের ভেতরেও। দূরপাল্লার অধিকাংশ বাস ছেড়ে গেলেও বেশ কিছু লোকাল বাসকে দেখা যায় ঢাকাগামী যাত্রী বহন করতে। এই লোকাল বাসগুলোতে সিট প্রতি ভাড়া ৭শ থেকে ১০০০ টাকা করে নিচ্ছে। বাসের ফিটনেস না থাকলেও কিছু শ্রমিক অতি মুনাফার লোভে লক্করঝক্কর মার্কা বাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে দিগুণ ভাড়ায়।

বগুড়া থেকে ঢাকা গাবতলীতে ছাদে ৩০০, ভেতরে ৭০০ টাকা, আর দাঁড়িয়ে বা ভেতরে কাঠের ব্রেঞ্চে ৫০০ টাকা টিকিট নেয়া হচ্ছে। 

বাস কাউন্টারগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি হবে। 

বগুড়া শহরের বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায় অসংখ্য ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। ট্রাকের মধ্যে রোদ ও বৃষ্টির কারণে ছাতা মাথায় দিয়ে কর্মে ফিরছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ট্রাকের পাটাতনে ত্রিপল পেরে দিয়ে যাত্রীদের বসিয়ে দিয়ে উপর দিয়ে দরি দিয়ে বেঁধে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের। 

ঢাকাগামী ট্রাক চালকের সহকারী আব্দুল মান্নান জানান, ট্রাকের পাটাতনে গাজিপুর চৌরাস্তা, বাইপাইল, আশুলিয়া এলাকায় পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৪শ টাকা। বাসে টিকিট নাই। যাত্রীরাই ঢাকায় যেতে একরকম চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই তো আর বেশি দামে টিকিট কিনতে পারছে না। 

ঢাকার মিরপুরে গার্মেন্টের শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম জানান, বাসের কোন টিকিট পাওয়া যায়নি। লোকাল বাসের টিকিট পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে। বাসগুলো ফিটনেসের অভাব রয়েছে। টিকিট না পেয়ে ট্রাকে করে ফিরতে হচ্ছে। 

ঢাকাগামী আব্দুস সালাম জানান, ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, গাজিপুরের টঙ্গি, আব্দুল্লাহ পুর, শ্রীপুরসহ এ সকল এলাকায় যত গার্মেন্ট রয়েছে তাতে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই কম ভাড়ায় কর্মস্থলে যেতে পারে তারই চেষ্টা থাকে সবার। বাসের টিকিট নেই। টিকিট পেলেও দাম চাইছে ৭০০ টাকা। এ কারণে ট্রাকে করে ৪০০ টাকা ভাড়ায় কর্মে ফিরতে হচ্ছে।
 
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল জানান, কোথাও কোন বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। তারপরেও যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাত্রীদের সেবা দিতে শ্রমিকদের বলা হয়েছে। যদি কেউ কোথাও টানা হেচড়া করে তবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাত্রীদের হয়রানি করার কোন নিয়ম নেই। 

বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি শাহ আখতারুজ্জামান ডিউক জানান, যাত্রী হয়রানি যেন না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর