১৭ আগস্ট, ২০১৯ ২১:৪৯

বাগেরহাটে ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভেসে গেছে সহস্রাধিক খামারের মাছ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভেসে গেছে সহস্রাধিক খামারের মাছ

বাগেরহাটে ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। শুক্রবার রাত ২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত অবিরাম বর্ষণে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পোর্টসহ তিনটি পৌরসভা ও নয়টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

এতে কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওযায় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মাছের খামার। 

মোংলা আবহাওয়া অফিস বলছে জেলায় ৫ ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ায় জনদুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি সাথে সাথে নামতে না পারায় দেখা দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। 

টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গোটাপাড়া, ষাটগম্বুজ, ডেমা,যাত্রাপুর ও বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার, বাসাবাটি, আলীয়া মাদ্রাসা রোড, হাড়িখালী, নাগেরবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল না থাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের কয়েক শত বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এছাড়া পৌরসভার সামনের সড়ক, শালতলা মোড়, রাহাতের মোড়, লিচুতলা এলাকার সড়কে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে সড়কের পানি নেমে গেলেও বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে।

এদিকে বছরের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মোংলা পৌর শহর ও শহরতলীর নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও বসত বাড়ি। বৃষ্টির পানি নামার সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বিশেষ করে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব কবরস্থান এলাকার বাসিন্দারা। পৌর শহরের আব্দুল বাতেন সড়ক, মিয়াপাড়া, জয়বাংলা, মাদ্রাসা রোড, বটতলার মুসলিমপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। 

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও ভারী বৃষ্টিতে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর ও চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক চিংড়ি খামার তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান।
 
বাগেরহাট পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম শিপন বলেন, ঘুম থেকে উঠেই ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজেই কাজ শুরু করি। পৌরসভার পক্ষ থেকেও অনেক কর্মী এ কাজে নিয়োজিত ছিল।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুশফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটু পানির কারণে আমাদের এলাকার জনসাধারণের চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছে। এক প্রকার পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। 

মাছ খামারি আবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার মাছের খামারসহ আশপাশের বেশ কয়েক শত মাছের খামার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। 

বাগেরহাট সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, শুধুমাত্র সদর উপজেলায় দুই থেকে আড়াইশ মাছের খামার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরোপন করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য চাষিদের নেট দিয়ে নিজ নিজ ঘের নিরাপদ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, আমি সকাল থেকে শহরের নিম্নাঞ্চল ঘুরে-ঘুরে দেখছি। শহরের কোন-কোন সড়কে এখনও পানি রয়েছে। নদীতে পানির উচ্চতা বেশি থাকলে শহর রক্ষাবাধেঁর স্লুইস গেট খুললে নদীর পানি শহরে ঢুকে পড়ে। এজন্য বেশি বৃষ্টি হলে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেলে শহরের পানি তাৎক্ষণিক নেমে যায়। এছাড়া বাগেরহাট পৌরসভা ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও ভালে করার জন্য একটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুই এক জায়গায় যে জলাবদ্ধতা আছে তাও সমাধান হয়ে যাবে। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর