২১ আগস্ট, ২০১৯ ০৯:৩৯

সাইনবোর্ড-শরণখোলা মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটার যেন মরণ ফাঁদ

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

সাইনবোর্ড-শরণখোলা মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটার যেন মরণ ফাঁদ

বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-শরণখোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের আমড়াগাছিয়া কাঠের পুল থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন তাফালবাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কের দুই পাশের কার্পেটিং ধসে গিয়ে কোথাও ৮ থেকে ৬ ফুট আবার কোনো স্থানে সড়কের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এই সরু সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শতশত যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

 
বিগত ২০১৬ সালে সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে বগী পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তখন শরণখোলা অংশের এই ১৪ কিলোমিটার পূর্বের অবস্থায় রেখে বাকি ৩৮ কিলোমিটার ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে তিন বছর ধরে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

এছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রায়েন্দা খালের ওপরের সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইড ওয়ালে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। এতে সড়কের নিচের অংশের বালু সরে ৮ থেকে ১০টি পয়েন্টে বিশাল সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে সেই ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে এলাকাবাসী। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটিও। এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় যে কোনো সময় বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। 

গত এক বছরে এই সড়কে প্রাণ গেছে দুই জনের, আহত হয়েছে বহু মানুষ। এর মধ্যে গত পাঁচ আগষ্ট উপজেলার পাঁচরাস্তা বাদল চত্বর মোড়ে বাসের ধাক্কায় ভ্যানযাত্রী নাছিমা বেগম (৪০) মারা যান। মেরুদন্ড ভেঙে গুরুতর আহন হন নাছিমা বেগমের কলেজ পড়ুয়া ছেলে নাজমুল (১৬) এবং দুটি পা ভেঙে যায় ভ্যানচালক প্রতিবন্ধী সবুর মিয়ার (৪৫)। এছাড়া গত বছরের ১৮ আগষ্ট রায়েন্দা-রাজৈর বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাসের চাপায় নিহত হন ভাড়ায়  যাত্রীবহনকারী মোটরসাইকেল চলাক ইউনুচ আলী (৩০)। সরু সড়কের কারণে এভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককেই।

বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষ আফজাল হোসেন মানিক বলেন, মহাসড়ক ও সেতুর পাশেই আমার স্কুল। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সবসময় সংশয়ে থাকতে হয় কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এই ১৪ কিলোমিটার প্রশস্তকরণসহ সেতুর দুই পাশের গর্ত দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই। 

শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ-মোংলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শামীম আহসান পলাশ বলেন, ১৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতোটাই খারাপ যা দিয়ে যানবাহ চলাচল মোটেই সম্ভবনা। তাছাড়া এই সড়ক দিয়ে ভ্যান, অটো, নছিমন চলার কারণে সরু সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এব্যাপারে বহুবার সওজ বিভাগে দাবি জানিয়েও ফল হয়নি। 

বাগেরহাটের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নির্মাণের কথা থাকলেও অর্থ সংকুলান না হওয়ায় শরণখোলা অংশের ওই ১৪ কিলোমিটার আগের অবস্থায় রেখে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে ওই ১৪ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কয়েক দফা পিএমপি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর