১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১১:০৬

বুকে ঝুলন্ত হৃদপিণ্ড নিয়ে চলছে গাজীপুরের শিশু আরাফাত

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

বুকে ঝুলন্ত হৃদপিণ্ড নিয়ে চলছে গাজীপুরের শিশু আরাফাত

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আরাফাত। জন্মের পর থেকেই তার হৃদপিণ্ডটি বুকের বাইরে বের হয়ে আছে। ব্যথার যন্ত্রণায় মাঝে মধ্যে ছটফট করেন শিশু আরাফাত। তখন দরিদ্র পিতার আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। শিশু আরাফাতের পিতা পিকআপ চালক। অন্যের জায়গায় মাটির ঘর তুলে বসবাস করেন। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম শিশু আরাফাতের যথাযথ চিৎিসার আশ্বাস দিয়েছেন।

গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পাইনশাইল দক্ষিণ পাড়া গ্রামে আব্দুল হকের বাড়ি। ৬ বছর আগে জন্ম নেয়া আরাফাত তার বাবা আব্দুল হক ও তার ফুফু মনোয়ারা বেগমের আদরে বড় হচ্ছে। শনিবার বিকেলে পাইনশাইল গিয়ে দেখা গেছে শিশুটির বুকের সামনে ঝুলে থাকা হৃদপিন্ডটি অনবরত নড়ে যাচ্ছে। মাটির ছোট্ট একটি ঘরে ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে থাকেন মনোয়ারা। বাবা আব্দুল হক ছেলেকে বোনের কাছে রেখেই কাজে যান। 

শিশুটির বাবা আব্দুল হক জানান, জন্মের আড়াই বছরের মাথায় তার মা সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে চলে যান সৌদি আরব। তিন বছর পর মা দেশে ফিরে সরাসরি চলে যান বাপের বাড়িতে। সন্তানের কোন খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ করে আরাফাতের বাবা আব্দুল হক। তার দরিদ্র স্বামীর ঘরে সে ফিরে আসবে না বলে স্বামীকে জানিয়ে দেয়। অসুস্থ সন্তানেরও কোন খোঁজ নেয় না মা। জন্মের পর থেকেই আরাফাতের হৃদপিণ্ডটি বুকের বাইরে ছিল। তখন আকারে ছোট ছিল। এখন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিন্ডটিও বড় হতে থাকে। আর ক্রমশঃ বাইরে বের হয়ে আসে। ছোট বেলা থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আরাফাতকে। চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়নি আরাফাত। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তার হৃদপিণ্ডে মাঝে মধ্যে অসহ্য ব্যথা অনুভব হয়। তখন সে ব্যথায় ছটফট করে। তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। দেশের বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ না থাকায় বাড়িতে রেখেই তার চিকিৎসা চলছে। শিশুটির পিতা সমাজের বৃত্তবানদের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়তা কামনা করেছেন।

শিশু আরাফাতের ফুফু মনোয়ারা বেগম জানান, আরাফাতকে স্কুলে দেয়া যাচ্ছে না। যদি কোনভাবে তার হৃদপিণ্ডে আঘাত লাগে তাহলে সে বাঁচবে না। তাই তাকে ঘরেই পড়ানো হচ্ছে। পাশের বাড়িতে অন্য শিশুদের সাথে তাকেও প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে।  

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: চন্দন কুমার সাহা জানান, এটা বাচ্চাদের একটা জন্মগত সমস্যা। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগের সমাধান রয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে বলে জানান এই চিকিৎসক।

শিশু আরাফাতের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। তিনি এ ঘটনা শোনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আবু নাসার উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। 


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর