৭ এপ্রিল, ২০২০ ১৮:৩৩

করোনার প্রভাবে লাকসামে অর্ধশতাধিক হাসপাতালের দুরাবস্থা

লাকসাম প্রতিনিধি:

করোনার প্রভাবে লাকসামে অর্ধশতাধিক হাসপাতালের দুরাবস্থা

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কুমিল্লার লাকসাম অঞ্চলের অর্ধশতাধিক হাসপাতলের দুরাবস্থা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কৌশলে চেম্বার বন্ধ করে দেয়ায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে রোগীশূন্য হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ছেন প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহ করতে অনেককে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার লাকসাম অঞ্চলে (লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট) তিনটি সরকারি হাসপাতাল এবং অর্ধ-শতাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তিন উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রামের তুলনায় এ অঞ্চলে অনেক কমমূল্যে চিকিৎসা সেবার সুফল ভোগ করে আসছে। এখানে হাসপাতালগুলোতে সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনই অসংখ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন।

সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতায় গত মার্চ মাসের শুরু থেকে তিন উপজেলার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের দুরাবস্থা শুরু হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কৌশলে চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেক চিকিৎসককে চেম্বার করার অনুরোধ করে এলেও সায় মিলছে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকরা রুটিনমাফিক ডিউটি চিকিৎসক দিয়ে মানবিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। 

চলমান পরিস্থিতিতে বৃহত্তর লাকসাম (লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট) অঞ্চলের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমূহে প্রত্যাশা অনুযায়ী রোগী তো দূরের কথা, তিন উপজেলা সদরের তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগী আসার ভয়ে সাধারণ রোগীরা সেখানে যেতে চান না।

তবে কিছু কিছু হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। অনেকটা নিরাপদ দূরত্বে থেকেই চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আগে চিকিৎসকরা খুব গুরুত্ব দিয়ে রক্তচাপ, হার্টবিট দেখলেও এখন ভয়ে তা করেন না। শুধুমাত্র রোগের বর্ণনা শুনেই চিকিৎসকরা ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। তবে চলমান প্রেক্ষাপটের কারণে এটাকে কেউ নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। রোগীদের সুবিধার্থে কিছু কিছু হাসপাতাল টেলিসেবা চালু করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার। দেশের যে কোন দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও আমরা মানবিক সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর ছিলাম। আজ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে চিকিৎসকদেরও সুরক্ষা নেই। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আমাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হলে আমরা পূর্বের ন্যায় চেম্বার শুরু করবো। সর্বোচ্চ মানবিক সেবা প্রদানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।  

লাকসাম প্রাইভেট ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের প্রাইভেট হাসপাতালসমূহে। লাকসামের অধিকাংশ হাসপাতাল রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে আমরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে সুবিধার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সকল ধরনের রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি। কারো বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর