বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় এবার বোরো মৌসুমের কৃষকের জমির ধান পাকার পর শ্রমিক সংকট থাকলে তা কেটে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুব বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবী’ নামের সংগঠনের সদস্যরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ধান কাটার প্রস্তুতিও নিয়েছে।
‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবী’ সংগঠনের শিক্ষিত যুবকরা বলছেন, শ্রমিক সংকটে তারা ধান কেটে দিলে কৃষকের অর্থ বেচে যাবে। এতে কৃষক আরও লাভবান হবে।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক এলাকার শ্রমিক অন্য এলাকায় যেতে সমস্যা হতে পারে এবং কৃষকের হাতে অর্থ নাও থাকতে পারে। এতে জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তির শিকার হতে পারেন শিবগঞ্জের কৃষক। কৃষকের ভোগান্তি লাঘব ও উপজেলায় ফসল উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবীরা এই ধান কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন। ধান কাটার কলা কৌশলও রপ্ত করেছেন। অনেকেই আবার পারিবারিকভাবেই ধান কাটতে জানে।
শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদ ও ঢাকাস্থ শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির সদস্যদের নিয়ে যৌথভাবে গঠিত এ স্বেচ্ছাসেবক টিম করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের তৃণমূলে মানুষের দ্বারপ্রান্তে।
কেভিড-১৯ সম্পর্কে আতঙ্ক নয়, সচেতন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীরের সার্বিক সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করাই এ স্বেচ্ছাসেবক দল গড়ে তোলা হয়।
-20.4.jpg)
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীরকে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে।
অন্য তিনজন উপদেষ্টা হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকাস্থ শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির দফতর সম্পাদক মিঠুন মিয়া, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মাসুদ রানা এবং শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির প্রচার সম্পাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম।
কমিটির সমন্বয়ক হলেন- সাবিহা আলম মুন্নী, আরিফ বিল্লাহ, মো. মশিউর রহমান, গাজীউর রহমান শিহাব, শাকিল আহমেদ ও আনিসুর রহমান আনিস। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন ও একজন ইউনিয়ন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এভাবে ১২টি ইউনিয়নে ১২০ জনের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রত্যকে মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
স্বেচ্ছাসেবী টিমের উপদেষ্টা ও ঢাকাস্থ শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির প্রচার সম্পাদক আব্দুল আলীম বলেন, দেশ আমাকে কি দিয়েছে সেটা বড় কথা নয়, এমন দুঃসময়ে আমি দেশের জন্য কী করছি এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকেরা বাংলাদেশে প্রাণ। এই দুর্যোগে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো একজন নাগরিক হিসাবে আমার বড় দায়িত্ব বলে মনে করছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা বেশির ভাগই গ্রামীণ সমাজের ছেলে মেয়ে। আমাদের অনেকের বাবা, চাচা কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তারা ফসল উৎপাদনের খরচ নিয়ে দিশেহারা। আমরা যে কোনো প্রয়োজনে কৃষকের পাশে দাঁড়াবো। আমাদের সামান্য শ্রম তাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের উপদেষ্টা মাসুদ রানা বলেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র দেশব্যাপী বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দেশে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন- কম্বাইন্ড হারভেস্টর ব্যবহার করতে পারেন যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় শিবগঞ্জেট গরীব, অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও কল্যাণ পরিষদের সমন্বয়ক সাবিহা আলম মুন্নী বলেন, মানুষ এখন গৃহবন্দি, কর্মহীন। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কৃষকরা আসতে পারছে না। তাই আসন্ন বোরো মৌসুমে গেরস্থের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে এবং কৃষকদের উপর চাপ কমাতে আমরা তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বিনা পারিশ্রমিকে ধান কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে গ্রামের সাধারণ গেরেস্তদের অর্থের সাশ্রয় এবং শ্রমিক সংকট দুই দূর হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকাস্থ শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক মিঠুন মিয়া বলেন, বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ে দেশের ফসল উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কৃষকদের সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
ঢাকাস্থ শিবগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ডা. এজেডএম মাইদুল ইসলাম বলেন, এই দুঃসময়ে আমরা শিবগঞ্জের কৃষকদের পাশে আছি। এজন্য সমিতির পক্ষ সহায়তা প্রদান করা হবে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, শিবগঞ্জের কিছু এলাকায় রংপুর থেকে ধান কাঁটার শ্রমিক আসে। তবে খুব বেশি শ্রমিক সংকট হবে না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ভয়ে গ্রামের শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে নাও পারে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। স্বেচ্ছাসেবীদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত