কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় গত ৩ বছর যাবৎ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি )কর্তৃক নিত্যপণ্য বিক্রির ডিলার সংকট বিদ্যমান। ফলে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এ উপজেলার স্বল্প মূল্যের নিত্যপণ্য কিনতে নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছে চরম বিপাকে। স্বল্প মূল্যের জিনিস কিনতে এখন তাদের দাবি দ্রুত ডিলার নিয়োগ করে টিসিবির মাল বিক্রি শুরু করা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলা রাজিবপুরে প্রায় ২০ হাজার হত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে যখন বাংলাদেশের মানুষ নিজ ঘরে বন্দী, ঠিক সেই সময়ে এ উপজেলার খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের বেকার হয়ে পড়া মানুষগুলো এখন ঘরবন্দী। এসব খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ-কর্ম, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে আলাদা হয়ে গৃহবন্দী হয়ে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে পেটের দায়ে ছুটতে হয় নিত্যপণ্যের বাজারে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় সেখান থেকে না কিনে টিসিবির স্বল্প মূল্যের জিনিস কেনার আগ্রহ তাদের অনেকের। তারা স্বল্প মূল্যে দ্রব্য কিনতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছুটে চলেন স্বল্প মূল্যের বাজারে।
এসব মানুষ এখন অর্থনৈতিক সংকটে চান টিসিবির মত ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্যের দোকান। বিশেষ করে আর কদিন বাদে আসছে পবিত্র রমজান। এ চিন্তা মাথায় রেখে এসব শ্রেণির মানুষ টিসিবির পণ্য কেনার প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু গত ৩ বছর যাবৎ ডিলার সংকটে সে আশা তাদের এখন হতাশায় ফেলেছে। পবিত্র রমজানের সময় এসব খেটে খাওয়া মানুষ টিসিবি’র দোকানে ভিড় করতেন।
রাজিবপুর বাজারের কুলির সরদার চৌকিদার রহমান জানায়, ‘হামরা একবার রমজানে যদি টিসিবির মাল কিনি তাহলে গোটা রমজান হামার হয়া যায়। কিন্তু এটেতো টিসিবি মাল দেয় না। তাহলে হামরা যামু কই। হুনছি জেলার অন্য উপজেলায় টিসিবির মাল দিচ্ছে। আমাদের রাজিবপুরে নেই। হামরা সরকারের কাছে দাবি জানাই। বালিয়ামারী ব্যাপারী পাড়ার জেলে নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাছ বেচি খাই। অনেক আগে ডিলারের দোকান থেকে আমরা চাহিদামত জিনিস কিনতে পাইছিলাম। এখন এখানে ডিলার নাকি চালায় না। তাই আমার মত অনেকের অসুবিধা হয়ে গেছে।’
জানা গেছে, গত ৩ বছর আগে রাজিবপুর উপজেলায় টিসিবির স্বল্পমূল্যের পণ্য বিক্রির জন্য একজন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিলার কামরুল আলম বাদল গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়। এরপর থেকে এ উপজেলায় ডিলারশিপ বন্ধ। ফলে গত ৩ বছর যাবৎ টিসিবির নিত্যপণ্য কেনা থেকে এ উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবেক ডিলার ও রাজিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল জানান, আমার ডিলারশিপ বাতিল হওয়ার পর নাছিমা এন্টারপ্রাইজ ও স্মৃতি এন্টারপ্রাইজ দুইজন ডিলার আবেদন করেন। এগুলো কুড়িগ্রাম থেকে অনুমোদন নিয়ে ঢাকা পাঠালে সেখান থেকে নিশ্চিত করবে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে ঢাকায় যত দ্রুত সম্ভব প্রেরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক