মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো কিশোরগঞ্জের ফুটবলকন্যারা এখন অনেকটাই নির্জীব হয়ে গেছে। খেলাধুলা বন্ধ, অনুশীলন নেই, নেই ড্রিবলিংয়ের তাল। করোনায় সবকিছুকেই ম্লান করে দিয়েছে।
খেলাধুলা যেমন বন্ধ, অর্থনীতির গতিও অনেকটা স্তব্ধ। ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে পারলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোরগঞ্জের ফুটবলকন্যারা করোনার আঘাতে এখন ধরাশায়ী। করোনার আক্রমণ ছন্দহীন করে দিয়েছে তাদের জীবন। আগে একেকজনের পরিবারের অভিভাবকরা নানা পেশায় জড়িত থেকে আয় উপার্জন করতেন। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকেই তাদের পরিবারের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে তাদের অনেকেই।
নারী ফুটবল দলের সদস্য করিমগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ইসরাত লিজার পরিবারে এখন অনেকটা অশনি সংকেত। বাবা নেই। সংসারে মা ও চার বোন। বড় বোন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। মূলত বড় বোনের আয়ের উপরই তাদের নির্ভরতা। করোনার এই সময়ে বড় বোনকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। লিজাসহ অন্য তিনজন পড়ালেখা করছে। লিজা জানায়, খেলতে খুব ইচ্ছে হয়, কিন্তু করোনার প্রভাবে সব বন্ধ। একদিকে সংসারের অভাব অনটন, অন্যদিকে পড়ালেখার খরচ। বর্তমান অবস্থা বেশিদিন চললে তাকে পড়ালেখা ও খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অন্য খেলোয়াড়দের অবস্থাও অনেকটা তাদের মতই।
কিশোরগঞ্জ নারী ফুটবল দলের কোচ হুমায়ুন কবীর খোকন জানান, তার গ্রুপে ৩৭ জন মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০/২৫ জনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তিনি জানান, ওরা খেলার জন্য পাগল। মেয়েদের এই দলটি ২০১৯ সালে জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। জাতীয় পর্যায়ের খেলায় এ দল থেকে পাঁচজন অংশ নিয়ে তারাও রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তাদের জীবন জীবিকার পথ একটু ভাল হলে তারা ফুটবলে চমক দেখাতে পারবে। একটু সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোশকতা পেলে বিশ্ব ফুটবলেও তারা আলো ছড়াতে পারবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আল আমীন সবুজ এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান ত্রাণ সহায়তার বিষয়টি প্রশাসনের মাধ্যমে হচ্ছে। খেলোয়াড় বা কোচের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে হয়তো কিছু হতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন