মাদারীপুরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে খেটে খাওয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকার কারণেই প্রতিদিন হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। রমজান ও করোনার প্রভাব কাজে লাগিয়ে পিয়াজ, রসুন, তেল, ছোলা, চাল, ডাল, বেসন, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে এ সকল পণ্যের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনাভাইরাস ও রমজানের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মাদারীপুরের প্রধান মোকাম পুরানবাজারের পাইকারি ৭ ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেট করে দ্রব্যের দাম বাড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, মাদারীপুরের নিত্য পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। এই কয়েকজনের সিদ্ধান্তেই পণ্যের দাম বাড়ে কমে। এই পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই মাদারীপুরের খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে থাকেন। এরাই সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অথচ তাদের গুদামে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র্র পুরানবাজারে উল্লেখযোগ্য পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে ৭ জন। পুরান বাজারের প্রধান ব্যবসায়ী কার্তিক বনিক, বাবুল দাস, অশোদ দে, জেল্লাল চৌধুরী, লিটন দাস, মালেক চৌধুরী, কুষ্ণ চন্দ্র সাহা। এদের কাছ থেকেই শহরের এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে থাকেন।
পুরানবাজারের ইকবাল হোসেন নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে প্রায় প্রতিদিনই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ওই সকল পণ্য বেশি দামে ক্রয় করে বাজারজাত করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত-তারা রয়েছেন নীরব দর্শকের সারিতে। মনিটরিং না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই সিন্ডিকেট। আমদানি নেই, করোনার কারণে মাল আসতে পারছে না, উৎপাদন নেই এমন নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মাদারীপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়, দুই সপ্তাহ আগের চিনির দাম ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। অথচ ২ সপ্তাহ আগে বিক্রি হত ৬৫ টাকা। একসপ্তাহ আগেও বিক্রি হত ৭০ টাকা। মোটা চালের কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, আর ২ সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৩৮ টাকা। মুসরি ডাল দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা।
সেই ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। গুড়া মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি। অথচ এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিলো ২৫০ টাকা। জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা অথচ এক সপ্তাহ আগে ছিলো ৩৫০ টাকা। ২ হাজার টাকার এলাচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা। ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হতো চিড়া। সেই চিড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। মুুুড়ির দাম বেড়েছে ২০ টাকা কেজিতে। আগে বিক্রি হতো ৫০ টাকা। সেই মুড়ি এখন ৭০ টাকা। অথচ মুড়ি ও চিড়ার একাধিক মিল রয়েছে মাদারীপুর শহরেই। বাজারেও ঘাটতি নেই কিন্তু দাম বেড়েছে। এজন্য বাজার মনিটরিংকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগিরা।
আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, সব কিছুর দাম বেশি। কয়েকদিন আগেও জিনিসপত্রের দাম কম ছিলো। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই দাম বেড়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ তারা জেন এসব নিয়ন্ত্রণ করে। তা না হলে গরীব মানুষ বাঁচবে কিভাবে?
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য লোক পাঠানো হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন