মাতাল হয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে জনরোষে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের তরিকুল ইসলাম (৩৩) নামে এক ইউপি সদস্য। স্থানীয় যুবকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করে বিপাকে পড়েন তিনি।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ১ নং কাঞ্চনতলা পাইকড়তলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তরিকুল ইসলাম বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য এবং কাঞ্চনতলা বিনপাড়ার তৈমুর আলী বিনের ছেলে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম। এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত এবং থানা পুলিশের কতিপয় সদস্যের সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে। এদিকে ঋণ খেলাপি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান আকবর আত্মগোপনে থাকার সুযোগে প্রায় রাতে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে টহল পুলিশকে নিয়ে ভূরিভোজ করেন তরিকুল ইসলাম এবং সেখানেই বসে মাদকের আসর।
ঘটনার পর থেকেই তিনি পুলিশ দিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ এপ্রিল বুধবার এশার নামাযের আগে গ্রামের পাইকড়তলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার জামাই ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের ও জনৈক রুবেল হোসেন। পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন গ্রামের আরো কয়েকজন যুবক।
ওই সময় সেখানে পৌঁছান ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম। সাথে গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ডালিম হোসেনও ছিলেন। ইউনিয়ন সদস্য তরিকুল ইসলাম ওখানে গিয়েই অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে আবদুল কাদেরকে হাতে থাকা লাঠি ছুঁড়ে মারেন। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও থেকে যান আবদুল কাদের ও রুবেল।
একপর্যায়ে ওই ইউপি সদস্য কাদেরের ওপর চড়াও হন। এ সময় পাশের চায়ের দোকান থেকে কাদের ও রুবেল লাঠি এনে প্রতিরোধ করে গ্রামের যুবকদের বেরিয়ে আসার আহবান জানালে গ্রামবাসী বেরিয়ে আসে। পরে জনরোষ থেকে পালিয়ে বাঁচেন ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম। খবর পেয়ে রাতেই গোমস্তাপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং এলাকাবাসীকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে মাইকিং করে চলে যায়। এ ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যান।
পরে গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দিলে আতঙ্কে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। বর্তমানে এলাকায় থমথমে আবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জনসমাগম রোধে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে বার বার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই আইন মানছে না। আর ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম পরিষদের সচিব, চৌকিদারসহ জনসমাগম রোধে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সরকারি কাজে বাধা দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে। ঘটনার পর আমরা তাদের বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দেয়ার জন্য মামলা হতে পারে এমন আশংকায় কতিপয় ব্যক্তি মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন