করোনাভাইরাসের প্রভাবে এমনিতেই বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। এর উপর পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে বরিশালের বাজারে আরেক ধাপ বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, আলু, সয়াবিন তেল, পিয়াজ, চিনি, ছোলাসহ রমজান কেন্দ্রিক সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতা সাধারণের। তবে দাম বৃদ্ধির দায় পাইকারদের উপর চাপিয়েছেন খুচরা দোকানিরা। তারা পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করেছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা করোনার প্রভাবসহ পরিবহন সমস্যার কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
এদিকে বাজারে সব নিত্যপণ্যের প্রচুর সরবরাহ আছে দাবি করে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক।
করোনা হানা দেয়ার আগে বরিশালের খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে। করোনা এবং সব শেষ রমজানকে কেন্দ্র করে দুই ধাপ বৃদ্ধির পর এখন বরিশালের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়।
একইভাবে ৪৪ টাকার চিকন চাল ৬০ টাকায়, ৬০ টাকার মসুর ডাল ১০০ টাকা, ২২ টাকার আটা ২৬ টাকা, ১৯ টাকার আলু ২৫ টাকা, ৯২ টাকার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, ৫৫ টাকার চিনি ৬৬ টাকা, ৬০ টাকার ছোলা ৭৫ টাকা, ১১০ টাকার মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ৩২ টাকার চিড়া ৬০ টাকা, ৭০ টাকার খেসারী ডাল ৯০ টাকা, ৬৫ টাকার গুড় ৮০ টাকা, ৫০ টাকার পিয়াজ ৬০ টাকা, ১১০ টাকার রসুন ১৬০টাকা, ১৫০ টাকার কালিজিরা ৩০০ টাকা এবং ৯০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের। তারা বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে খুচরা দোকানীরা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সমূদয় দায় চাপিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর। তারা বলেন, পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য কিনে সামান্য লাভে ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন তারা। পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ খুচরা দোকানীদের।
অপরদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে করোনার প্রভাব, পরিবহন সমস্যাসহ নানা সংকটের কথা জানিয়েছেন।
বাজার রোডের মুদি ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্য আনা নেওয়া, পরিবহন এবং কৃত্রিম সংটকের কারণে দাম বাড়ে। পণ্যের সংকট হলেও দাম বেড়ে যায়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে।
নিত্যপণ্যের পাশাপাশি রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে মাল্টা, আপেল, ন্যাশপতি, কমলাসহ সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বেড়েছে। এ জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন বিক্রেতারা।
নগরীর ফলপট্টির ফল ব্যবসায়ী মো. সুমন বলেন, রমজানের আগ মুহূর্তে বাজারে সব ফলের দাম বেড়েছে। ফলের আড়তদার এবং আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সব ফলের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছুই করার নেই।
বাজারে যখন সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতারা দিশেহারা, তখন একমাত্র সু-খবর ডিমের বাজারে। স্মরনকালের সর্বনিম্নদামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। নগরীর বাজার রোডে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ২৪ থেকে ২৬ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার রোডের পাইকারী ডিম ব্যবসায়ী মো. হারুন মিয়া জানান, ডিমের এত কম দাম স্মরনকালে ছিলো না। উৎপাদিত ডিম পরিবহনে সমস্যা থাকায় উৎপাদকরাও কম দামে পাইকারদের দিচ্ছেন। তারাও কম দামে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, বাজার সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে টিসিবি’র মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। অযৌক্তিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ প্রশাসন কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এরপরও কেউ বাজার অস্থিতিশীল করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা