বিশেষ ব্যবস্থায় বুড়িমারীতে পাটবীজ নিয়ে এসে আটকে পড়েছেন ৬১ জন ভারতীয় ট্রাক চালক। বাংলাদেশ থেকে তাদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি পাঠালেও সাড়া মেলেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের। ২৪ দিন ধরে ট্রাকেই খাওয়া-ঘুম চলছে তাদের। যার ফলে এসব ট্রাক চালকরা করোনা ভাইরাসের কারণে পরিবার-পরিজনের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে সোমবার দুপুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে দেখা গেছে, একটি ট্রাকে কেবিনে বসে নামাজ শেষে দুই হাত তুলে অঝোরে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করছেন। তাঁর নাম ইজাহার আলী। বাড়ি ভারতের বিহার রাজ্যের মতিহার জেলার পশ্চিম চম্পারণ।
নামাজ শেষে তার কাছে জানা গেল তাদের দুর্দশার কথা। অঝোরে কেঁদে কেঁদে তিনি জানান, স্ত্রীকে একদিনের কথা বলে মহাজনের গাড়িতে পাটবীজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ট্রাক খালি করে চেকপোস্টে গেলেই গাড়িগুলো দেয় আটকে। লকডাউনের কারণে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ভারতে। বাড়িতে তাঁর একমাত্র ছেলে ও স্ত্রী থাকে। তার মত আরো ৬১ জন ট্রাকচালক এখন আটকে আছেন লালমনিরহাটের বুড়িমারী এই স্থলবন্দরে।
গত ৪ এপ্রিল বিশেষ অবস্থায় পাটবীজ নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে বিষয়টি। জানিয়েও কিছুই হচ্ছে না। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দর চত্বরে ২৪ দিন ধরে ট্রাকে খাচ্ছেন, আর মশার কামড়ে ঘুমিয়ে দিন পার করছেন তারা।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস্ সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বাংলাদেশ থেকে তাদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি পাঠালেও সাড়া মেলেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের। এখনও পর্যন্ত ফেরত নেওয়ার আশ্বাস মেলেনি।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরেই ট্রাক ও চালকদের রাখা হয়েছে। সিএন্ডএফ অ্যাজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্য কিনে দিচ্ছেন। চালকেরা নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতীয় দূতাবাস ও কোচবিহারের ডিএমের সাথে একাধিকবার যোগযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনও সাড়া নেই। তাই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের রাখা হয়েছে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে। তাদের দেশে পাঠানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল