রমজান মাসে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার কাপড় ও গার্মেন্টস ব্যবসার ভরা মৌসুম। মাত্র এক মাস ব্যবসার উপার্জন দিয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেন। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। উপার্জন তো দূরের কথা, লকডাউনের কারণে একমাসের অধিক সময় থেকেও দোকানের শার্টার বন্ধ। অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারী পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সেই সাথে আছে ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের বোঝা। চলমান ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা সরকারের প্রণোদনার সুফল পেতে চান।
জানা যায়, লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে ছোট-বড় শত শত কাপড় ও গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রয়েছেন। চাহিদার বেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী সারাবছর ব্যবসার লাভ তেমনটা চোখে দেখেন না। যা আয় করেন তা দিয়েই চলে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও পরিবারের খরচ। তাদের ব্যবসার বছরের ভরা মৌসুম রমজান মাস। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই, সদর দক্ষিণ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে জামা-কাপড় ক্রয় করতে আসেন। মাসজুড়ে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের চোখে ঘুম থাকে না। সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটান। দোকানের উপার্জনে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের পরিবারে হাসি ফুটে। এসময়ের উপার্জন থেকে অনেকে ব্যাংক ও এনজিওর ঋণ শোধ করেন। কিন্তু এবার লকডাউন তাদের সকল স্বপ্ন কেঁড়ে নিয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীর দুর্দিন যাচ্ছে।
স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুস জানান, পবিত্র শবে-বরাতের পূর্ব থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা শুরু হয়। তারা এসময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রথম লটে প্রচুর মালামাল এনে দোকানে পসরা সাজান। চাহিদার ভিত্তিতে অনেকে ১০/১৫ রোজা পর্যন্ত লটে মালামাল সরবরাহ করেন। কিন্তু আজ চতুর্থ রোজাতেও প্রথম লটের মালামাল আনতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ধার-দেনা করে মালামাল আনলে লাভইবা কি হবে? করোনার ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। লকডাউনের কারণে দোকানের শার্টার একমাসের অধিক সময় থেকে বন্ধ। অধিকাংশ মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এবার ঈদে মানুষের কেনাকাটার তেমন আগ্রহ থাকবে না বলে তিনি জানান।
দৌলতগঞ্জ বাজার কাপড় ও গার্মেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দৌলতগঞ্জ বাজারের কাপড় ও গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের দুঃসময় যাচ্ছে। প্রতিবছর রমজানের এমন সময়ে কেনাকাটা জমে উঠতে শুরু করলেও এবার লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীর দুর্দিন যাচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে মানবেতর দিনাতিপাত করছে।
তিনি বলেন, বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। রমজান মাসের উপার্জন দিয়ে ঋণের টাকা শোধ করেন। কিন্তু এবার কিভাবে ব্যবসায়ীরা ঋণ শোধ করবে তা নিয়ে অনেকে চিন্তিত। স্থানীয় কাপড় ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার সুফল পেতে চান তারা।
লাকসাম পৌরসভা মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাজারে যে সকল পণ্যের দোকান চালুর নির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো চালু আছে। এখন পর্যন্ত কাপড় ও গার্মেন্ট ব্যবসা খোলার কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল