বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (বিভাগীয় প্রধান) ডা. এম এ আজাদ সজলের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরের লিফটের নিচ থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনা রহস্যজনক দাবি করে ডা. আজাদের স্বজনরা তার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন। তবে বিষয়টি দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে পুলিশ।
ডা. এমএ আজাদ সজল বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্টের পাশাপাশি নগরীর কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোগী দেখতেন (প্রাইভেট প্রাকটিস)। তিনি ওই ভবনের ৭ম তলায় একা বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী এলাকায়। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান থাকেন ঢাকায়।
সর্বশেষ সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোগী দেখেন ডা. আজাদ। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ডিউটিরত এক বয়কে ইফতারি আনতে পাঠান তিনি। ওই বয় ইফতারি নিয়ে এসে দেখেন ডা. এমএ আজাদের চেম্বারের কক্ষ তালাবব্ধ। সে ইফতারির প্যাকেট তার দরজার হাতলে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। রাতে ওই বয় ফের তার জন্য রাতের খাবার নিয়ে এসে দেখতে পান তার ইফতারির প্যাকেটটি ওভাবেই ঝুলছে। তার চেম্বারের দরজা আটকানো। তিনি চেম্বারেও নেই। এরপর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায় ওই বয়।
এদিকে, মঙ্গলবার ভোর রাতে সেহরির সময় ঢাকা থেকে ডা. আজাদের স্ত্রী মুঠোফোনে তাকে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিষয়টি তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০তলা হাসপাতাল ভবনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খোঁজাখুঁজি করেন। এক পর্যায়ে একজন আয়া গ্রাউন্ড ফ্লোরে লিফটের নিচে ডা. আজাদের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে ৭ম তলায় তার বসবাসের কক্ষের দরজা ভেঙে মৃত চিকিৎসকের মুঠোফোন এবং চশমা উদ্ধার করা হয়।
ডা. আজাদের মৃত্যুকে সন্দেহজনক মনে করে পুরো ঘটনা তদন্ত পূর্বক তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন এবং বিচার দাবি করেন তার স্বজনরা।
এদিকে ডা. এমএ আজাদের মৃত্যুতে মর্মাহত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। তিনি বলেন, ডা. আজাদই একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালাতেন। তার মৃত্যুতে বার্ন ইউনিটে সংকটের সৃষ্টি হবে। তিনি তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন।
অপরদিকে দুর্ঘটনা জনিত কোনো কারণে ডা. আজাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছেন মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বরিশালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল হক মানিক। তার মৃত্যুতে তিনিও গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ডা. আজাদ কিভাবে লিফটের নিচে গেলেন, নাকি অন্য কোনো বিষয় রয়েছে সব কিছু তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে ডা. আজাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন হবে আশা পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মোক্তার হোসেনের।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/বাজিত হোসেন