মহামারী করোনাভাইরাসে সারা পৃথিবী আজ স্তব্ধ। থেমে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেকার হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ। আর ভয়াবহ করোনাভাইরাসে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চরের মানুষের জীবন। এসব চরে বাস করা লক্ষাধিক মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। চরের অধিকাংশ মানুষই রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর।
ধরলার চর খাটামারীর বাসন্ত বালা জানান, তার পরিবারে ৬ জন সদস্য, তিনি এবং তার এক ছেলে দিন মজুর দিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু প্রায় এক মাস থেকে ঘরে বসে আছি। সরকার থেকে ৫ কেজি চাল ও এক কেজি আলু পেয়েছিলাম ২৫ দিন আগে। তা শেষ হয়ে এখন আলু সিদ্ধ আর চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি, ক্ষুধার জ্বালা তো আর সহ্য হচ্ছে না।
সদরের চর রাজপুর গ্রামের রাবেয়া রেওয়া বলেন, 'আমার ছেলে আরমান মিস্ত্রির কাজ করে। এক মাস থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। সংসার কোনোভাবেই চলছে না, দিন যাচ্ছে আলু সিদ্ধ খেয়ে, কেউতো হামাক এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা করিল না বাহে, মরণ বুঝি হয় বাহে!
একই গ্রামের শেফালি খাতুন জানান, তার স্বামী ভ্যানচালক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। আদিতমারির চর গোবর্ধন গ্রামের আয়নাল হক জানান, তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে চলতেন, প্রাইভেট বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে আছেন। সবচেয়ে কষ্টকর পরিস্থিতি ওই এলাকার রিকশাচালক ষাটর্ধো সন্তোষ চন্দ্রের। গত ১০ দিন ধরে তার পরিবার শুধু আলু সেদ্ধ করে খেয়ে ছিল।
তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, এই চরম সময়ে চেয়ারম্যান মেম্বার কেউই খোঁজ রাখে না, প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব তবুও কারও কাছে হাত পাতবো না। একই অবস্থা লালমনিরহাটের তিস্তা ধরলার ৬৩ চরের মানুষের। সরকার থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কাজে বের হতে না পেরে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হাকাকার অবস্থা।
সদরের রাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের চরের বাসিন্দাই রয়েছে ১৩ হাজার, ত্রাণ পেয়েছি মাত্র ৭’শ লোকের। এখন আমি কি করব।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, চরে তো ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা করব চরের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ আনার।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম