৩০ এপ্রিল, ২০২০ ২১:১৪

শ্রীমঙ্গলে ঢিলেঢালা লকউাউন, বাড়ছে আতঙ্ক

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

শ্রীমঙ্গলে ঢিলেঢালা লকউাউন, বাড়ছে আতঙ্ক

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ঢিলেঢালা লকডাউন চলছে। আর এ সুযোগে প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে মানুষ এসে প্রবেশ করছে এ উপজেলায়। এতে করে আতঙ্কে আছেন এ উপজেলার মানুষেরা। 

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর সংক্রামন ঝুঁকি মোকাবেলায় গত ১৩ এপ্রিল মৌলভীবাজর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। 

গণবিজ্ঞপ্তিতে লকডাউন চলাকানীল সময়ে এ জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃউপজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও একইরূপ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল সকল ধরনের গণপরিবহন ও জমায়েত। শুধু জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসা সেবা, কৃষি পণ্য, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ও সংগ্রহ এই লকডাউনের আওতার বহির্ভূত রাখা হয়েছিল। 

কিন্তু এই লকডাউন অমান্য করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোটবড় হাটবাজারে মানুষের আনাগোনা লেগে আছে। কারণে অকারণে শহরের রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ছেন মানুষজনেরা। কিছু  কিছু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখছেন। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব না মেনে পণ্য কেটাকাটা করা হচ্ছে। সারা শহড়ে বেড়েছে রিকশা, গাড়ি, মোটরসাইকেল, টমটম ও সিএনজি চালিত আটোরিকশা চলাচল। অন্য জেলা থেকেও পণ্য নিয়ে শহরে প্রবেশ করছে ট্রাক, লড়ি, পিকআপ ভ্যান। এসব গাড়িতে করে আসছেন লোকজন। এছাড়া শহরে চলাচলকারী গাড়িতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে কমিউনিটি ট্রান্সামিশনের। 

গত ২২ এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা ফুলছড়া চা বাগানের এক কজেল ছাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর আগে গত ২২ মার্চ ঢাকা থেকে আসা শহরের এক ব্যাংক কর্মকর্তার শরীরেও করোনাভাইরাসনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও শহরে মাইকিং করে, টহল দিয়ে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে সচেতনা করেও মানুষদের কিছুতেই ঘরে বন্দী করে রাখতে যাচ্ছে না। দোকান খোলা রাখা, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া, অযথা ঘোড়াফেরা করার অপরাধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেতে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে কিছুতেই কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। 

গত ১০ দিনে শহরের কলেজ সড়কে ঢাকার আজগড় আলী হাসপাতাল থেকে এসেছেন চারজন, ইছরপুর এলাকায় হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন একজন, ভাড়াউড়া চা বাগানে এসেছেন একজন। কালাপুর পেট্রল পাশে ঢাকা থেকে এসেছেন দুইজন, পূবালী আসাবিক এলাকায় ভারত থেকে এসেছেন একজন। এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল ভোরে পিকআপ ভ্যানে করে এসেছেন পাঁচ জন। 

এর আগে, গত ২০ দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের ফেসবুকে পোস্ট থেকে জানা যায়, রাধানগড় গ্রামে ৩ জন, পূবাসা আবাসিক এলাকায় ১ জন, লালবাগ এলাকায় ৩ জন, ভূনবীরের ইলামপাড়া গ্রামে ৮ জন, রাজপাড়া গ্রামে ২ জন, সিন্দুরখান রোড বনবাড়ি এলাকায় একজন, সিন্দুরখান ষারেরগজ গ্রামে ৫ জন, কালিঘাট রোড বাশগাড়ি হোটেলের পাশে ১ জন, শহরতলীর মুসলিমবাগ ১ জন, ডলুছড়ায় ১ জন ও একটি চা বাগানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেট থেকে এসেছেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত ১০৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রির্পোট এসেছে ২৫ থেকে ৩০ জনের। এর মধ্যে দুই জনের রির্পোটে করোনা পজেটিভ এসেছে। 

সিনিয়র এএসপি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সার্বক্ষণিক শ্রীমঙ্গলে প্রবেশমূখে দুটি চেক পোস্ট করছি। আজও কিছু লোককে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শহরে পুলিশি টহল আরও জোরদার করা হচ্ছে।’  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন,‘মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যু ভয় না থাকে তা হলে আমরা কি করবো। আমরা মানুষকে ঘরে রাখার জন্য দিন রাত কষ্ট করে যাচ্ছি। তাদের বুঝাচ্ছি। তবুও মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে। এখন আমরা যেমন আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি, ঠিক একই ভাবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তা না হলে তো কিছুই করা যাবে না।’ 

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘মানুষের লকডাউন না মানার প্রবণতা আমারও চোখ পড়েছে। লকডাউন কার্যকর করা আর চেক পোস্ট গুলো কিভাবে আরও কড়াকড়ি ভাবে করা যায় এ বিষয় গুলো আমি দেখছি।’  


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর