৬ জুন, ২০২০ ০৯:১৯

দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন লিপি ওসমান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন লিপি ওসমান

লিপি ওসমান (বামে) ও দগ্ধ রোগী নাহিদ (ডানে)।

“আমি কি পচে গলে মারা যাব। কেউ কি নেই আমাকে একটু বাঁচাবেন। শরীর থেকে গোশত খসে পড়ছে। পচে যাচ্ছি আমি।  করোনায় পকেটে টাকা নেই। চিকিৎসা করব কোথা থেকে। মরার আগে যদি একটু চিকিৎসা পেয়ে মরতে পারতাম। তাহলে মৃত্যুটা হয়ত একটু শান্তির হতে পারত”। 

আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় নজরুল ইসলাম নাহিদ নামে এক অসহায় ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় এভাবেই একটি আকুতি জানিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর সেই অসহায় মানুষের আকুতি নারায়ণগঞ্জ মানবতার সংগঠন “এহসান পরিবার” তাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট করেন। 

পোড়া রোগীর সেই বাঁচার আক্ষেপ নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির। বৃহস্পতিবার বিকালে লিপি ওসমান তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে। ওই দিন রাতেই পোড়া রোগী নাহিদের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এমপি পত্নী লিপি ওসমান।

এ বিষয়ে শুক্রবার বিকালে এহসান পরিবারের সমন্বয়ক সাংবাদিক রোমান চৌধুরী জানান, ফতুল্লার চাঁনমারী মাউড়াপট্রি এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম নাহিদ এক সময় ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করতেন। গত বছরের ডিসেম্বরে  স্ত্রী-কন্যাসহ ঘরের গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। স্ত্রী ও কন্যা সুস্থ  হয়ে উঠছেন। কিন্তু মার্চ মাসে করোনার কারণে টাকার অভাবে কোনও হাসাপাতালে আর যেতে পারেননি দগ্ধ নাহিদ। পরবর্তীতে ঘরে পড়ে থাকতে থাকতে অগ্নিদগ্ধ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে নাহিদের। এক পর্যায়ে তার শরীরের মাংস খসতে থাকে। একদিকে টাকার অভাব অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কোথায় কিভাবে চিকিৎসা নেবে কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছিল না পরিবারটি। এর মধ্যেই ওই রোগীর পরিবার বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। পরবর্তীতে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে বাড়িতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখতে পেয়ে সহযোগিতার জন্য আমাদের “এহসান পরিবারের” হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দিই। এতে খবর পেয়ে রোগীকে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির জন্য ব্যবস্থা করেন এমপি শামীম ওসমান পত্নী লিপি ওসমান। 

এ বিষয়ে রোগীর ভাই জাহিদ ইসলাম জানান, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমরা ভাবতে পারিনি এভাবে আল্লাহ আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। লিপি ওসমানের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা শুধু তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারব। এটাই আমাদের সামর্থ্যে আছে। আমার  ভাই এখন হাসপাতালে আছে। 

এ বিষয়ে লিপি ওসমান মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, একজন মানুষ পচে গলে মরবে এটা হতে পারে না। মানুষ মানুষের জন্য। ওর জন্য আমি যা করতে পেরেছি তা কিছুই না। একজন মানুষ আরেকজনের বিপদে পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। ওর চিকিৎসা আরও আগে থেকেই দরকার ছিল। দোয়া করি যেন মানুষটা সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে পারে। 

তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি প্রতি আহ্বান জানান, এই্ করোনায় মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন। আমার আহবান বা অনুরোধ থাকবে সামাজের বিত্তবান মানুষগুলোর প্রতি, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। দেখবেন মানুষ খুশি হয়ে দোয়া করবে। আর আাল্লাহর মাখলুক খুশি তো আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি থাকবেন।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর