৬ জুন, ২০২০ ১৫:২২

গোমতীর ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি, হুমকির মুখে মসজিদ-স্কুল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গোমতীর ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি, হুমকির মুখে মসজিদ-স্কুল

কুমিল্লার তিতাসে গোমতীর ভাঙনের কবলে পড়েছে বসতবাড়ি। বিপর্যস্ত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ ও স্কুলও। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা তিতাস উপজেলার ৭নং নারান্দিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গোমতী নদীর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত নারান্দিয়া (পশ্চিম পাড়) গ্রামে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রামের অধিকাংশ লোকই কৃষক। এক ফসলী ধানই তাদের এক মাত্র অবলম্বন। গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে ৮-১০টি স্থানে। 

কয়েক বছর ধরে সাত শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো প্রায় ৭০-৮০টি বাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এই গ্রাম থেকে প্রায় ২০০টি পরিবার ভিটাবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। তাছাড়া গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাউছিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা এবং কয়েকশত বছরের পুরানো জামে মসজিদটিও হুমকির মুখে রয়েছে।  

নারান্দিয়া (পশ্চিম পাড়ের) এই হাওড়ে বাঘাইরাপুর, জিয়ারকান্দি, গোপালপুর, দড়িকান্দি, সোনাকান্দা, নারান্দিয়া, চেংগাতলি, দুখিয়ারকান্দি,গোপচর গ্রামসহ কয়েক হাজার একর ধানের জমি বন্যা থেকে রক্ষার একমাত্র বাঁধটি না থাকার কারণে কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে সারা বছর আতঙ্কিত থাকেন। এ বছর অনেক কৃষক ফসল হারানোর ভয়ে জমির আবাদ থেকে বিরত থাকেন। এই বাঁধটি ভাঙনের ফলে গ্রামের এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাতায়াত করতেও নৌকার প্রয়োজন হয়। স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা সময় মত নৌকা না পেলে ব্যাহত হচ্ছে তাদের পড়ালেখা। তাছাড়া অসুস্থ এবং প্রসূতিদের বেলায় যাতায়াতের কথা মাথায় আসলে নাভিশ্বাস উঠে যায় তাদের। 

প্রায় দেড় যুগে পূর্বে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ডুবন্ত বাঁধটি নির্মাণ হওয়ার ৪-৫ বছর পরই নদী গর্ভে বিলীন ও চিড়চিড়া পয়েন্টের তাজ স্ক্রিম সংলগ্ন ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ৩৫ বিঘা আবাদী জমির ফসল হারিয়ে দিশেহারা মোস্তাক বেপারী। ১৭ বিঘা জমি ও একাধিকবার বাড়ি হারিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন মজু প্রধান। তাছাড়া আবাদী জমি ও একাধিকবার বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন এই গ্রামের আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস, আলম ভুইয়া, হানিফ সরকার, শাহ আলম মুন্সী, তোতা মিয়ার পরিবারসহ অনেকের পরিবার।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাবেক মেম্বার মফিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আবেদন করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। 

এ ব্যাপারে বর্তমান ইউপি সদস্য মাসুম মোল্লা বলেন, অনেক তদারকির পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। এটি এখন ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন একাধিকবার পরির্দশন করে গেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কাজ নজরে আসেনি। এ ভাঙন রোধে আমি কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) সাংসদ সেলিমা আহমাদ মেরী ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ভাঙনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি। পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর