চলতি বর্ষাতেও পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। কারণ বর্ষার শুরু থেকে চলছে পাহাড়ে টানা বৃষ্টি। কখনো ভারি, কখনো মাঝারি আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি। রাঙামাটিতে অব্যাহত এ বৃষ্টিতেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। যদিও এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। আগে ভাগে বসানো হয়েছে সতর্কতা সাইন বোর্ডও। বৃষ্টি দেখলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে সর্তকতা মাইকিং। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। 

রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন এক লাখ ৫০ হাজারের অধিক মানুষ। 

বর্ষা আসলেই এসব পাহাড়ে দেখা দেয় ধস। ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু তবুও পাহাড় ছাড়তে নারাজ এখানকার বাসিন্দারা। 

শুধু রাঙামাটি শহর নয়, অপর দুই পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জুড়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বসবাস করছে শহস্রাধিক। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধস দেখা দেয়ায় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধূরী বলেন, রাঙামাটিতে বেশ কিছু দিন ধরে চলছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। যে কোন মুহুতে ঘটতে পারে পাহাড় ধসেরমত বড় কোন ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার তাগিত দেওয়া হলেও তারা নিজেদের ঝুঁকি নিজেরাই তৈরি করছে। 

এদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশেপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়কের ওপর পড়ছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন ধরণে দুর্ঘটনার না ঘটলেও এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারও পাহাড় ধসের বড় ধরনে ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। 

তাই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূণ এলাকা পরিদর্শন করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস না করার জন্য এলাকায় এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেন তিনি।

এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতি কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাহাড় ধসে প্রাণ হানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন মহলের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি মুলক সভাও করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৭-২০১১ সালের জুন মাসে। ওই সময় পাহাড় ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় শিশু, মহিলাসহ একই পরিবারের ৮জনের। এপরও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালে ক্সয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২০জন। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যায় দেখা যায়া- রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসের ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮হাজার ৫৫৮টি পরিবারের। তার মধ্যে সম্পন্ন বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এছাড়া শহর এলকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলিন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।এছাড়া ২০১৮-১৯সালে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছিল ৯জনের। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম