১৪ জুলাই, ২০২০ ১০:৪১
ধরলার পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপরে

কুড়িগ্রামে বন্যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে বন্যায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

অবিরাম বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে কুড়িগ্রামে হু হু করে ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২য় দফা বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। নদ-নদী তীরের সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর এবং দুধকুমর নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি সামান্য কমে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

২য় দফা বন্যায় জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৪ শতাধিক গ্রামের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে এখন চরম সংকটে রয়েছে।জেলা-উপজেলা শহরের সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে এসব মানুষ। বানভাসীদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। উঁচু রাস্তা, বাঁধ, স্কুল ঘরে ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তবে নৌকার অভাবে অনেকেই নিরাপদ স্থানে যেতে পারছে না।

ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সোমবার সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রবল স্রোতের তোড়ে সেখানকার বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত  হয়েছে এবং সব ভেসে যাচ্ছে। নিম্নাঞ্চলসমূহের বাড়িঘর তলিয়ে গিয়ে ১ম দফা বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার কোন কিছুই রক্ষা করতে পারছেন না এসব মানুষ। অপ্রতুল ত্রাণ সকলের ভাগ্যে জুটছে না বলে অভিযোগ বন্যার্তদের। 

নিজেদের সহায় সম্বল বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হাঁস, মুরগী, গরু ছাগলসহ গবাদি পশু ও ঘরের ধান চালসহ অনেক জিনিস বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। কাঁচা সড়ক ছাড়াও সদর উপজেলার মধ্যকুমরপুর এলাকায় পাকা রাস্তায় পানি উঠেছে। ফলে এখানকার বাজারে আসা মানুষজনের কষ্ট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চর থেকে নৌকা নিয়ে পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে নৌকায় নিজেদের মালামাল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে বানভাসীরা। এখনও অনেক এলাকায় বানভাসীদের ত্রাণ হাতে না পৌঁছায় বন্যার্তরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

সদর উপজেলার মধ্যকুমরপুর হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা শহর যাওয়ার পাকা রাস্তা এখন পানির নিচে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান, ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। 

সারডোব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জহুর উদ্দিন জানান, সোমবার সকালে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। একে একে ৫টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং অনেক মালামাল ভেসে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

হলোখানা ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন জানান, বাঁধটি ভাঙার ফলে হলোখানা, ভাঙামোড়, কাশিপুর, বড়ভিটা ও নেওয়াশি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম একে একে প্লাবিত হচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে দু’টি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বাঁধটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে বিকল্প বাঁধটি রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু পানির প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে যায়।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। ৪০০ মে. টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর