১৫ জুলাই, ২০২০ ১৯:০৭

চলনবিলে গো খাদ্য সংকট, বিপাকে কৃষক

নাটোর প্রতিনিধি

চলনবিলে গো খাদ্য সংকট, বিপাকে কৃষক

উজানের দিকে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও টানা কয়েকদিনের অতিবর্ষণের ফলে দেশের নদীগুলোতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, গতি বেড়েছে পানির প্রবাহে। ফলে দেশের নদীবেষ্টিত এলাকা ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ। তলিয়ে গেছে পাথারের পর পাথার ফসলের ক্ষেত, গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার লোক।

বন্যাদুর্গত এলাকায় গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চলনিবলের নাটোর অংশ এখন বন্যা কবলিত। এখনো বেশির ভাগ এলাকায় হাঁটুপানি রয়েছে। এ কারণে পানিতে মাঠ-ঘাট, ফসলি জমি এমনকি চাষ করা ঘাসের জমিও ডুবে গেছে। 

বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের গচ্ছিত রাখা খড়ও। বানভাসিরা রাস্তা,  উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গো খাদ্যের সংকটে ক্রমেই গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে কোরবানির ঈদে গবাদিপশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক ও খামারিরা।

সিংড়া পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলায় তলিয়ে গেছে ২২৮০ হেক্টর জমি। একই সঙ্গে পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন ৩৫০ পরিবার। এদের মধ্যে কিছু পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইতোমধ্যেই ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরো ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।

নাটোর পানি উন্নয়নবোর্ডের  নিড়বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত আত্রাই নদীর পানি সিংড়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার অন্যান্য নদীর পানি এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

এ বছর ৪৮ হাজার ৪০১টি গবাদি পশু ঈদ উপলক্ষ্যে বাজারজাত করা হবে। আগাম বন্যার কারণে তাদের স্বাভাবিক বিচরণ ও খাদ্যগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। এবং করোনার প্রভাবে পশুর ন্যায্যমূল্য থেকে খামারিরা বঞ্চিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস।

গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড় বন্যার পানিতে পচন ধরেছে, আবার কোথায়ও ভেসে গেছে। এ কারণে গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তাছাড়া সরকারিভাবে কোনো ধরনের গো খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন গবাদি পশুর মালিক ও জনপ্রতিনিধিরা।

ইয়ার আলী নামে এক কৃষক জানান, প্রতিটি পশুর জন্য দিনে এক কেজি দানাদার খাদ্য ও তিন কেজি খড়ের প্রয়োজন। নিজেরা কোনওরকম দুই বেলা খাবার পাইলেও গরুগুলার জন্য খাবার জোগাড় করতে পারছি না। চতুর্দিকে পানি, কোনো ঘাস নাই। গরুগুলার জন্য রাখা খড় পানিতে ডুবে গেছে। গরু নিয়া আমরা এখন খুব কষ্টে আছি।

চলনবিল অধ্যুাষিত কৃষক আল আমিন জানান, এখনো রাস্তায় আছি। বাড়ির মধ্যে পানি শুকায়নি। গরুকে তো খানা দিতে পারি না। এজন্যই নিয়ে আইছি। বন্যার কারণে গরুর শরীর শুকায় গেছে। আগে ৮০-৯০ হাজার দাম উঠছে, এখন বলছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গৌরাঙ্গ তালুকদার জানান, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় 'নাটোর অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট' এ্যাপসের মাধ্যমে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয় হবে। এছাড়াও করোনার প্রভাবে ন্যায্যমূল্য থেকে খামারিরা বঞ্চিত হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর