৯ আগস্ট, ২০২০ ১৬:২৮

তবুও খ্যাপের আশায় থাকে তারা!

উত্তম কুমার হাওরাদার, কলাপাড়া

তবুও খ্যাপের আশায় থাকে তারা!

'করোনাভাইরাসের কারণে আগের মতো পর্যটক আসে না। তাই আমাগো গাড়িতে খ্যাপ নাই। তবুও খ্যাপের আশায় থাকি। এই বুঝি খ্যাপ আইছে। আইজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ টাহা হইছে। সারাদিনে যা কামাই করি, তার অর্ধেকটা দিতে হয় মহাজনকে। বাকি টাকাটা থাকে মোর। সেই টাকা দেই সংসারে। তবে পর্যটক আসলে আয় ভালো হয়'-এভাবেই বলছিল কুয়াকাটা সৈকতে ঘোড়ার গাড়িচালক কিশোর মিজান হোসেন।

ঘোড়া চালকদের সূত্রে জানা যায়, তাদের মালিকের ৯টি ঘোড়া রয়েছে। একেকটি ঘোরার একেক রকম নামও দেওয়া হয়েছে। যেমন চাঁদনি, চুমকি, রিনা, পাগলা, লালচাঁন-১, লালচাঁন-২, বাদশা, আলিফ ও চাঁদ বহাদুর। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে প্রায় চার মাস কুয়াকাটা লকডাউন থাকায় ঘোড়াগুলোরও সৈকতে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

ঈদের আগ মুহূর্তে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও খুব বেশি পর্যটক না থাকায় ঘোড়া চালকদের আয়ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর সৈকতের ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি চালকরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বাড়ি কুয়াকাটা সৈকতের আশেপাশে। কারও বাবা আছে, মা নেই। কারও মা আছে, বাবা নেই। আবার কারও মা-বাবা কেউই নেই। এরাই ঘোড়ার মালিকের কাছ থেকে ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি চুক্তিতে নিয়ে সৈকতে কাজ করেন। 

ঘোড়া চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সৈকতে মোটারসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘোড়ায় চরা কিংবা ঘোড়ার গাড়ি কদর কমে গেছে। আর মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ও খুব সহজেই যাওয়া যায়। আর ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়িতে এখানে আসা পর্যটকরা শখের বসে উঠে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের মতো পর্যটক নাই। তাই আমাদের আয় কমে গেছে। এখন আমাদের দিন পার করেতে হচ্ছে খুব কষ্টে।'

ঘোড়ার গাড়ির মালিক মো. সেন্টু মিয়া জানান, ঘোড়ার খাবারের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। আগে ঘোড়ার খাবারের দাম খুব কম ছিল। এছাড়া কুয়াকাটা এখন আগের মতো পর্যটক নেই। খ্যাপ কমে যাওয়ায় আয়ের চেয়ে ব্যায় বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব বেশি দিন আর এ পেশায় থাকা যাবে না।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ বাঁধন বলেন, ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য বিনোদন। এই বাহনটি সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।  

কুয়াকাটা পৌর মেয়ার আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা চাইলে পৌরসভার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে যারা ঘোড়া চালক তারা অত্যান্ত গরিব ঘরের সন্তান। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রায় চার মাস কুয়াকাটা লকডাউন ছিল। পর্যটক না থাকায় ঘোড়া চালকরা বসে ছিল। গত ১ জুলাই থেকে পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ছুটির দিন প্রতি শুক্রবারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে। আর আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে এবং করোনা সংক্রমণরোধে ট্যুরিস্ট পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর