১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:৪৩

গাজীপুরে বন্যা ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরে বন্যা ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা

গাজীপুরে করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা গত তিন মাসে যেসব ফসল ফলিয়েছেন, তাতে লাভের মুখ তো দূরের কথা পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা ফসলি জমিতে ফসল নেই, শুধু মাচা পড়ে আছে। নতুন করে ফসল ফলানোর চিন্তাও করতে পারছেন না তারা।

কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা। করোনা ভাইরাসের প্রভাব তো শেষই হচ্ছে না। কিন্তু কৃষকরা এ ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন এবং পরবর্তী ফসল কিভাবে রোপন করবেন তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলার মোহনায় ভেড়ামতলী গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি ফসল ফলিয়ে করোনা ও বন্যার প্রভাবে ৭০ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে তার।

চাষী সাদেকুর রহমান জানান, ১ একর ৭০ শতক জমিতে গেল বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে চিচিঙ্গা, ধুন্দল, লাউ, পাট শাক ও কলা বাগান করেছিলেন। প্রতি ৩৫ শতক জমি ১০ হাজার টাকায় জোতদারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। ফসল ফলাতে তার খরচ হয়েছে আনুমানিক ৬ লাখ টাকা। ওই টাকাও ঋণ করেছেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে। কিন্তু এবারের ভারীবর্ষণ ও বন্যার পানির কারণে তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ পরিশোধ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন তিনি।

৮০ শতক জমিতে ধুন্দল ও চিচিঙ্গা চাষ করেন সাদেকুর রহমান। শুরুতে ফলন আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু যথাযথ মূল্য পাননি করোনা ভাইরাসের কারণে। ভাইরাসটির প্রভাবে নানা প্রতিবন্ধকতায় পাইকাররা এলাকার বাজারে আসতে পারেননি। যারা এসেছেন তারাও পণ্যের যথাযথ দাম দেননি। বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। 

এক সপ্তাহ বিক্রি করার পরই ভারীবর্ষণ, বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জমি থেকে ফসল উঠাতে পারেননি। অন্যদিকে কোনো কোনো সময় ফসল উঠালেও সেসব পানির দরে বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে খরচ করে জমি থেকে আর ফসল উঠাননি।

কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, ঋণ ও জমি ভাড়া নিয়ে ৩৫ শতক জমিতে শবরী কলার বাগান করেছিলেন। পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি তিনি। কলা চাষই তার সম্বল ছিল, তাই পরবর্তী ফসল ফলানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম জানান, গাজীপুর জেলায় মৌসুমি শাক-সবজি আবাদে জমির পরিমাণ ৭ হাজার ২৪২ হেক্টর। এবার বন্যা বা জলাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরির পাশাপাশি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪০৮টি কৃষি পরিবারের মধ্যে নতুন করে ফসল ফলাতে বীজ, সার, ঘেরা বেড়া ও সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সবজি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০টি পরিবারে এবং মাসকেলাই দেওয়া হচ্ছে ৬০০ পরিবারে। তবে এসব দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আওতায়।

মাহবুব আলম বলেন, কৃষকেরা প্রয়োজনবোধ করলে স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহায়তা করবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর