ফরিদপুর দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে ধনিয়া, সরিষা, তিল, পিঁয়াজ বীজের আবাদ ফরিদপুরে তুলনামুলক বেশী হয়ে থাকে। তাই এই সময়ে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মৌ বাক্স নিয়ে মাঠে হাজির হন মৌ চাষিরা।
শুধু বিভিন্ন ফসলের মাঠেই নয়, আমবাগানেও মৌ বাক্স ফেলে মধু আহরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকশ মৌ চাষি। তবে ফরিদপুর জেলায় ঔষধী গুনসম্পন্ন কালোজিরার মাঠে বাক্স পেতে মধু আহরণে বেশ লাভবান হচ্ছেন মৌ চাষিরা। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে খামারীরা ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকার কালোজিরার মাঠে মৌ বাক্স পেতেছেন। এ জেলা থেকে মধু আহরণ বেশী হওয়ায় দিনকে দিন বাড়ছে মধু সংগ্রহকারী চাষির সংখ্যা।
বসন্ত ও গ্রীস্ম মৌসুমে ফরিদপুরের বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে কালোজিরার সাদা ফুলে ভরে থাকে। ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য মৌ চাষিরা মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বিশেষ কায়দায় মধু আহরণ করে থাকেন। বর্তমানে মধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ফসলের মাঠের পাশে এবং আমের বাগানে ছোট ছোট কাঠের বাক্সে মৌমাছি রেখে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে।
কালোজিরার মধু সংগ্রহের পাশপাশি সরিষা, ধনিয়া, তিলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে এই মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমানে ফরিদপুরের মৌ চাষিরা কালোজিরার মধু সংগ্রহ করছে এবং প্রতিটি খামার থেকে ১০দিন পরপর দুই মণের অধিক মধু সংগ্রহ করছে।
সংগ্রহকৃত মধু বিভিন্ন কোম্পানী এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন মৌ চাষিরা। এ বছর কালোজিরার মধু পাইকারী কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা, মিশ্র ফুলের মধু কেজি প্রতি ৬শ টাকা এবং সরিষার মধু কেজি প্রতি ৫শ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত মধু পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। সেই সাথে মৌ চাষিদের সাফল্য দেখে মধু আহরণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকেরা। জেলার সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের শিক্ষিত যুবক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীর জন্য বিভিন্ন স্থানে গেলেও চাকুরী পাইনি। এলাকায় কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চাকুরীর আশায় ঘরে বসে না থেকে মৌচাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি।'
উন্নত প্রদ্ধতিতে নিরাপদভাবে মধু সংগ্রহে মধু আহরণকারীদের মৌ বাক্স ও প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মোঃ হযরত আলী। তিনি জানান, 'দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশকিছু মৌ খামারী এই জেলায় এসে মধু সংগ্রহ করছে। প্রতি বছরই মধু চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে।'
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর জেলায় এ বছর ৪ হাজার ১৭০টি মৌ বাক্স বসিয়ে মৌচাষ করা হচ্ছে। যা থেকে প্রায় ১৪ হাজার কেজি মধু আহরিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির